পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

 পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps
পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

পাম্প (Pump)

পাম্প শক্তির রূপান্তর নীতিতে চালিত হয়ে তরল পদার্থকে স্থানান্তর করে। অর্থাৎ যে যন্ত্রের সাহায্যে পানি বা অন্য কোনো তরল পদার্থ শোষণ বা উত্তোলন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করা হয় তাকে পাম্প
বলে। পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় পাম্পের গুরুত্ব অপরিসীম।

পাম্পের তিনটি মূল অঙ্গ থাকে। যেমন:
১) আকর্ষক বা শোষক পাইপ (Suction Pipe)
২) প্রধান অংশ বা বড়ি (Body) এবং
৩) প্রেরক পাইপ (Delivery Pipe)।
প্রধান অংশটির একদিতে শোষক পাইপ এবং অপরদিকে প্রেরক পাইপ যুক্ত থাকে। যে পানি তোলা হবে, শোষক পাইপটি সে পানিতে ডুবানো থাকে। প্রধান অংশের যন্ত্রপাতির সাহায্যে পানি শোষক পাইপের মাধ্যমে প্রধান অংশে এসে প্রেরক পাইপের সহায়তায় বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। প্রধান অংশটিই পাম্পের মুখ্য অংশ। এর মাঝেই থাকে ইঞ্জিন (Engine)। এটি শক্তির রূপান্তর নীতিতে চলে এবং আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিকে সচল করে। ইঞ্জিনকে চালু রাখতে বিভিন্ন জ্বালানি (Fuel) যথা : বাষ্প, কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

পানি সরবরাহ প্রকল্পে পাম্প ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of pumps in a water scheme)

নিম্নলিখিত প্রয়োজনে পানি সরবরাহ প্রকল্পগুলোতে পাম্প ব্যবহৃত হয় :

ক) উৎস থেকে শোধনাগারে প্রাকৃতিক পানি উত্তোলন করা।
খ) পরিশোধিত পানি উঁচুতে তৈরি ট্যাংক (Elevated Tank) এ মজুদ করা।
গ) কোনো নিচু অঞ্চল থেকে উঁচু অঞ্চলে পানি উত্তোলন করা।
ঘ) মূল বণ্টন পাইপে (Distribution Pipe) সরাসরি পানি পাম্প করা।
ঙ) মূল বণ্টন পাইপে পানির চাপ বাড়ানো।
চ) কুয়া থেকে মাটির ওপরে কিংবা সরাসরি উত্তোলিত জলাধারে পানি প্রেরণ করা।
ছ) ছোট ছোট বাড়ি-ঘরের কাজে এক চৌবাচ্চা থেকে অপর চৌবাচ্চায় পানি পাঠানো, বাড়ির ছাদের ওপরের জলাধারে পানি ওঠানো, পনির চাপ বাড়ানো ইত্যাদি কাজ করা।

অন্য পোষ্ট : আর্ক ওয়েল্ডিং কাকে বলে? আর্ক ওয়েল্ডিং কত প্রকার ও কি কি - আর্ক ওয়েল্ডিং কি


পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

পাম্পের শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Pumps)

পাম্পকে এর কার্য পদ্ধতি, ব্যবহৃত জ্বালানি এবং যান্ত্রিক পদ্ধতি অনুযায়ী নিম্নলিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে।
ক) পাম্পে ব্যবহৃত জ্বালনি অনুসারে পাম্পকে নিচে লিখিত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে, যেমন:
অ) বাষ্প চালিত পাম্প (Steam engine pump)
আ) ডিজেল চালিত পাম্প (Diesel engine pump)
ই) পেট্রোল চালিত পাম্প (Petrol engine pump)
ঈ) বৈদ্যুতিক পাম্প (Electric pump)

খ) পাম্পের কার্য-পদ্ধতি অনুসারে
অ) গভীর কূপ পাম্প (Deep well pump)
আ) লো-লিফট্ পাম্প (Low lift pump)
ই) হাই-লিফ্ট পাম্প (High lift pump)
ঈ) বুস্টার পাম্প (Booster pump)
উ) অগ্নিনির্বাপক পাম্প (Fire service pump)

গ) যান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসারে
অ) বায়ুতাড়িত পাম্প (Air-lift pump)
আ) কেন্দ্রাতিগ পাম্প (Centrfugal pump)
ই) স্থানচ্যুতি পাম্প (Displacement pump)

কয়েকটি পাম্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps


১) বায়ুতাড়িত পাম্প (Air-lift Pump)

উঁচু চাপে সংকুচিত (Compressed) বায়ু চালনা করে পানি উত্তোলন করাই এ পাম্পের উদ্দেশ্য। একটি চোঙ্গাকৃতি (Cylindrical) পাইপের এক প্রান্তের কিছু অংশ খাড়াভাবে কূপের পানির ভেতর ডুবিয়ে রাখা হয় এবং অপর প্রান্তটি কূপের মুখ বরাবর থাকে। এ পাইপটিকে এডুকেটর পাইপ বলে। বায়ু সংকোচন যন্ত্র (Air Compresor) হতে সংকুচিত বায়ু একটি 'এয়ার ডিফিউজারের মাধ্যমে এডুকেটর পাইপের তলায় প্রবেশ করানো হয়। পাইপের ভিতর বায়ু মিশ্রিত এই পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব, কূপের পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব হতে কম থাকায় চাপের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। ফলে কূপের পানি এডুকেটর পাইপ দিয়ে কূপের মুখ বরাবর এসে বাইরে উপচে পড়ে।
বায়ুতাড়িত পাম্প কূপ থেকে অধিক পানি উত্তোলনে অপর যে কোনো পাম্প অপেক্ষা বেশি উপযোগী। এটি বিশ্বস্ত, টেকসই এবং কম খরচে সংরক্ষণ করা যায়। অধিক উচ্চতায় পানি তুলতে এ পাম্প একা কার্যকর নয়। পানির বায়ু সম্পৃক্ততার কারণে এর ক্ষয়প্রাপ্ততা বেড়ে যায়।

২) কেন্দ্রাতিগ পাম্প (Centrifugal Pump)

কেন্দ্রাতিগ বলের মূলনীতি অনুযায়ী এ পাম্প নির্মিত। এই পাম্পের প্রধান অংশটি (Body) গোলাকার কক্ষ বিশেষ। এর মাঝে থাকে চক্রাকারে পানি নিক্ষেপক যন্ত্র। এ যন্ত্রের নাম ইস্পেনার (Impeller)। ইম্পেলারটি কতকগুলো বক্রাকার (Curved) বা এককে চন্দ্রমুখী (Radial) পাত দিয়ে গঠিত। এগুলো একটি শ্যাফট্ -এর চারপাশে অটিকানো থাকে।
ফলে শ্যাটাটি ঘোরালে পাতগুলো ঘোরে। পানি পাম্পের দেহ প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করলে ইম্পেলার নিয়ে আবর্তিত হয়ে আকর্ষক বা শোষক পাইপের সাথে সমকোণে সহোরে নিক্ষেপিত হয়। এভাবে পানি আবর্তিত হওয়ার ফলে পানির গতিশক্তি, চাপ শক্তিতে (Pressure) রূপান্তরিত হয়।
কেন্দ্রাতিগ পাম্প দু'রকমের, যথা :
ক) ভলিউট (Volute) বা কুণ্ডলী আকার
খ) টারবাইন (Turbine) বা চক্রাকার

ক) ভলিউট (Volute) বা কুণ্ডলী আকার এ প্রকার পাম্পে ইম্পেলার যন্ত্রটি একটি ক্রমবর্ধমান কুণ্ডলী আকারের কক্ষে পানি নিক্ষেপ করে। বক্রনকার পাজগুলো থেকে বহিগত পানির বেগ উচ্চতা (Velocity Head) এই কক্ষটিতে সে চাপ উচ্চতায় (Pressure Head) রূপান্তরিত হয়। কক্ষপথে আবর্তিত পানির বেগ এক থাকে।

খ) টারবাইন (Turbine) বা চক্রাকার এ পাম্পের খোলের ভেতর থাকে ইম্পেলার। ইস্পেদারের চারদিকে একটি স্থির পরানো থাকে। ইম্পেলারের বক্রাকার পাড়ের ওপর দিয়ে বহির্গত পানি ডিফিউশন রিং-এর ছিদ্র দিয়ে বাইরের কক্ষপথে গিয়ে পড়ে ও পরে নির্গমন পাইপ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই পাম্পের কর্মক্ষমতা ভলিউট পাম্পের চেয়ে বেশি। এটি ১৫ সে.মি. ও তার অধিক ব্যাসের কূপে সচরাচর ব্যবহৃত হয়, যেখানে পাম্পটি রূপে নিমজ্জিত এবং বৈদ্যুতিক মোটরটি ওপরে ভূমিতে থাকে। ২০০ গ্যালনপ্রতি মিনিটে ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন পাম্পের কর্মদক্ষতা ৭৫% থেকে ৮০% আশা করা যায়।


অন্য পোষ্ট : টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

কেন্দ্রাতিগ পাম্পের বৈশিষ্ট্য

এ পাম্প একটি অতি উঁচু গতিসম্পন্ন পাম্প। সাধারণত এটির ইস্পেনার প্রতি মিনিটে ১০০০ হতে ৩৫০০ বার ঘোরে। এ পাম্পের ডিসচার্জ একই রকম হয় এবং বিদ্যুৎ খরচ কম। এ পাম্পকে বৈদুতিক মোটরের সাথে সরাসরি সংযোগ দেয়া যায়। কেন্দ্রাতিগ পাম্প চালু করার সময় আকর্ষক বা শোষক পাইপ হতে মূল অংশ পর্যন্ত স্থান পানি ভরা থাকা দরকার। অন্যথায় ইম্পেলারটি শুধু ঘুরতে থাকবে, কিন্তু পানি উঠবে না। পাম্পকে ঐভাবে পানি পূর্ণ করার নাম প্রাইমিং (Priming)। এর জন্য শোষক পাইপের পাদদেশে একটি একমুখী পাদ কপাটিকা(Foot Valve) লাগানো থাকে। এ কপাটিকাটি শুধু উত্স থেকে শোষক পাইপে পানি আসতে দেয়, কিন্তু কখনই শোষক পাইপের পানি উৎসে ফিরে যেতে দেয় না।
মূল অংশ এবং প্রেরক পাইপ বা নির্গমন পাইপ এর সংযোগস্থরেও একটি কপাটিকা থাকে। এর নাম স্টপ ভাত (Stop valve)। পাম্প বন্ধ করার সময় নির্গমন পাইপপের পানি যাতে ফিরে গিয়ে পাম্প সেহে আঘাত করতে না পারে, তাই এ ব্যবস্থা। বস্তুত পাম্প চালু বা বন্ধ করার সময় এ নির্গমন কপাটিকাটি বন্ধ রাখতে হয়। সাধারণত একটি এক স্তর বিশিষ্ট কেন্দ্রাতিগ পাম্পের সাহায্যে ১৮ মিটার (বাস্তবে ১২ মিটার) উঁচুতে পানি তোলা যায় । এর চেয়ে বেশি উচ্চতায় পানি তুলতে হলে কেন্দ্রাতিগ পাম্পকে শ্রেণিবদ্ধভাবে বহু স্তরে সাজাতে হবে। সে সময় প্রতি স্তরে ৩০ মিটার থেকে ৪৫ মিটার উঁচুতে পানি তোলা সম্ভব হবে।

কেন্দ্রাতিগ পাম্পের সুবিধা

ক) অন্যান্য পাম্পের তুলনায় এ পাম্প অত্যন্ত সস্তায় পাওয়া যায়।
খ) এই পাম্প অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।
গ) যে কোনো শক্তি দিয়ে এই পাম্প চালানো যায়। এটির যন্ত্রাংশ প্রাপ্তি, সংস্থাপন ও চালনা অতি সাধারণ
ও সহজ।
ঘ) অত্যন্ত উঁচু গতিসম্পন্ন পাম্প বিধায় এতে উত্তোলিত পানির পরিমাণে বেশি পাওয়া যায়।
ঙ) এটি ছোট জায়গায় স্থাপনযোগ্য।
পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

৩) স্থানচ্যুতি পাম্প (Displacement Pump)

এ পাম্পের মূল অংশে যান্ত্রিক উপায়ে বায়ু শূন্যতার সৃষ্টি করা হয় এবং শোষক পাইপ উৎস থেকে এই শূন্যস্থানে পানি টেনে আনে। তারপর নির্গম পাইপের ভেতর ঐ পানিকে ঠেলে দিয়ে আবার শূন্যতার সৃষ্টি করে। ফলে পেছন দিকে যে টানের সৃষ্টি হয়, তাতে শোষক পাইপ সংলগ্ন উৎসের পানি তা পূরণ করতে শোষক পাইপের পাদদেশের একমুখী কপাটিকার মাঝ দিয়ে শোষক পাইপে চলে আসে। এভাবে উৎসের পানি পর পর স্থানচ্যুত হতে নির্গম পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে, তাই এই পাম্পের নাম স্থানচ্যুতি পাম্প। স্থানচ্যুতি পাম্প দুই প্রকার, যথা
ক) রেসিপ্রোকেটিং পাম্প (Reciprocating Pump)
খ) রোটারি পাম্প (Rotary Pump ) ।

ক) রেসিপ্রোকেটিং পাম্প
ক) রেসিপ্রোকেটিং পাম্প আবার দুই প্রকারের যথা :
(অ) সিঙ্গেল অ্যাকটিং (Single acting) এবং
(আ) ডাবল্ অ্যাকটিং (Double acting) পাম্প। এ পাম্পটি একটি পিস্টন (Piston) সংযোগকারী দত্ত্বের সহায়তায় একটি চাকার সাথে যুক্ত থাকে। এই চাকাটির নাম ফ্লাই হুইল (Fly wheel)। চাকাটিকে ঘোরালে পিস্টনটি চোঙ্গাকৃতি বড়ির সাথে সংযোগকারী দত্তের সাহায্যে সামনে এবং পেছনে যেতে পারে। প্রথমে বহির্মুখী বা পশ্চাৎমুখী ঘাতে (Stroke-এ ) এটি পেছনে আসে, তখন চোঙ্গাকৃতি দেহের মাঝে শূন্যতা সৃষ্টি হয় এবং সাথে সাথে শোষক পাইপ থেকে পানি থেকে পানি মূল অংশে এসে জমা হয়। পরবর্তী ঘাতে পিস্টনটি সামনে এগিয়ে এসে ঐ পানিকে নির্গমন পথ দিয়ে ঠেলে বের করে দেয়। এরূপ এক ঘাতে শূন্যতা সৃষ্টি ও বড়িতে পানির প্রবেশ এবং পরবর্তী ঘাতে বড়ি হতে পানির নির্ঘুমন হওয়াকে সিঙ্গেল অ্যাকটিং পাম্প বলে। কিন্তু, যদি পাম্পের দেহে ভাল্ভ এর সংখ্যা বাড়িয়ে ও বিন্যাস করে প্রতি ঘাতেই পানির শোষণ ও নির্গমন ব্যবস্থা সম্ভবপর হয়, তাকে বলা হয় ডাবলু অ্যাকটিং রেসিপ্রোকেটিং পাম্প। বেশি পরিমাণ পানি অনেক উঁচুতে তুলতে রেসিপ্রোকেটিং পাম্প বেশি কার্যকর। যদিও পানির প্রবাহের হার সদা সর্বদা এক নয়, কিন্তু তা সবিরাম ও কম্পনযুক্ত। অবশ্য ডাবল অ্যাকটিং পাম্পে এ ত্রুটি কিছুটা সংশোধনযোগ্য।

খ) রোটারি পাম্প।
এ পাম্পে একটি ইস্পাতের প্রকোষ্ঠে পিরোর বা ক্যামের ঘূর্ণনের ফলে শোষক পাইপের সাহায্যে পানি সমহারে (Uniform rate 4 ) বের হয়ে আসে। কিন্তু এ পাম্প বাস্তবে খুব একটা ব্যবহার করা হয় না।


অন্য পোষ্ট : গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের কার্যপ্রণালি

নিচে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের কার্যপ্রণালি বর্ণনা করা হলো। কেন্দ্রাতিগ বলের মূলনীতি অনুযায়ী এ পাম্প নির্মিত। এ পাম্পের প্রধান অংশটি (Body) গোলাকার কক্ষ বিশেষ। এর মাঝে থাকে চক্রাকারে পানি নিক্ষেপক যন্ত্র। এ যন্ত্রের নাম ইম্পেলার (Impeller)। ইম্পেলারটি কতগুলো বক্রাকার (Curved) বা এককেন্দ্রমুখী (Radial) পাত দিয়ে পঠিত। এখলো একটি শ্যাফ্ট- এর চারপাশে আটকানো থাকে। ফলে শ্যাফটটি ঘোরালে পড়িগুলো ঘোরে। পানি পাম্পের দেহ প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করলে ইম্পেলার দিয়ে আবর্তিত হয়ে আকর্ষক বা শোষক পাইপের সাথে সমঝোপে সজোরে নিক্ষেপিত হয়। এভাবে পানি আবর্তিত হওয়ার ফলে পানির গতিশক্তি চাপ শক্তিতে (Pressure-এ) রূপান্তরিত হয়।

রেসিপ্রোকেটিং পাম্পের কার্যপ্রণালি

পাম্পটি একটি পিস্টন সংযোগকারী দণ্ডের সহায়তায় একটি চাকার সাথে যুক্ত থাকে। এ চাকাটির নাম ফ্লাই হুইল। চাকটিকে ঘোরালে পিস্টনটি চোঙাকৃতি বড়ির সাথে সংযোগকারী দত্তের সাহায্যে সামনে এবং পেছনে যেতে পারে। প্রথমে বহির্মুখী বা পশ্চাৎমুখী ঘাতে এটি পেছনে আসে, তখন চোঙ্গাকৃতি দেহের মাঝে শূন্যতা সৃষ্টি হয় এবং সাথে সাথে পানি শোষক পাইপ হতে মূল অংশে এসে জমা হয়। পরবর্তী ঘাতে পিস্টনটি সামনে এগিয়ে এসে পানিকে নির্গম পথ দিয়ে ঠেলে বের করে দেয়।

সাবমার্জিবল পাম্পের কার্যপ্রণালি

এ পাম্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো চালক মোটরটি জল নিক্ষেপক যন্ত্রের (Impeller or Turbine Bowl) নিচে কূপের পানির ভেতর সদা-সর্বদা ডোবানো থাকে। মোটরের বিদুৎবাহী অংশ ও অন্যান্য বিয়ারিংকে পানির সংস্পর্শ এড়াতে পারদ সীলযুক্ত তেলভর্তি খাপের মাঝে রাখা হয়। অবশ্য, আধুনিক পদ্ধতিতে পানির সংস্পর্শ এড়ানোর পরিবর্তে পানিকে ঘূর্ণায়মান অংশগুলোর শীতক এবং পিচ্ছিলকারক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গভীর ও অগভীর এ দুই রকম কূপের পানি বিনা তদারকি বা অল্প তদারকিতে তোলার জন্য এ পাম্প খুব কার্যকর। এ পাম্পের প্রাথমিক খরচ কম, কিন্তু এর কর্মদক্ষতাও অপেক্ষাকৃত কম। তা ছাড়া মোটর একবার বিকল হলে মেরামতের জন্য পুরো পাম্প ইউনিটকে ওপরে তুলে আনতে হয়।

পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

টারবাইন পাম্পের কার্যপ্রণালি

এ পাম্পের খোলের ভেতর থাকে ইম্পেলার। ইম্পেলারের চারদিকে একটি স্থির ডিফউশান রিং পরানো থাকে। এম্পেলারের বক্রাকার পাতের ওপর দিয়ে বহির্গত পানি ডিফিউসন রিং-এর ছিদ্র দিয়ে বাইরের কক্ষপথে গিয়ে পড়ে ও পরে নির্গমন পাইপ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এ পাম্পের কর্মক্ষমতা ভলিউট পাম্পের চেয়ে বেশি। এটি ১৫ সেমি ও তার অধিক ব্যাসের কূপে সচরাচর ব্যবহৃত হয়, যেখানে পাম্পটি কূপে ডোবানো এবং বৈদ্যুতিক মোটরটি ওপরে ভূমিতে থাকে। ২০০ গ্যালনপ্রতি মিনিটে ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন পাম্পের কর্মদক্ষতা ৭৫% থেকে ৮০% আশা করা যায়।

পাম্প স্থাপন পদ্ধতি (Pump installation process) পাম্প স্থাপনের এগই পাম্প নির্বাচন করতে হয়।

পাম্প নির্বাচনে বিবেচ্য বিষগুলো কোনো পাম্পিং ইউনিটের জন্য কোনো ধরনের পাম্প নির্মাণ করা হবে, তা নির্ভর করে ঐ পাম্প দিয়ে কী ধরনের কাজ করা হবে, তার ওপর। পাম্প নির্বাচনে নিচে লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয় :
(১) পাম্পের কার্যক্ষমতা।
২) পাম্পের মোট লিফ্ট-এর পরিমাণ।
৩) পাম্প স্থাপনের স্থান ও তার পরিমাপ।
৪) পাম্প স্থাপনের প্রাথমিক খরচ।
৫) মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে মোট খরচ।
৬) তদারকি ও নিপুণতা খরচ।
৭) পাম্পে ব্যবহৃত জ্বালনির প্রাপ্যতা।
৮) পাম্পকৃত পানির প্রকৃতি।
(৯) পাম্পকৃত পানির হারের বিভিন্নতা।

পাম্প স্থাপনের পূর্বের বিবেচ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ :

১) আকর্ষক বা শোষক উচ্চতা (Suction Lift)
২) পাম্পের পরিচালনা শক্তি (Power for Pumps)
৩) রিজার্ভ পাম্প (Reserve Pump)
৪) ইউনিটের আকার (Size of Unit)
৫) পাম্পের মোট উত্তোলন (Total Lift of Pump)
৬) হেড অপচয় (Head Loss )
এর পর পাম্পটি যথাস্থানে অনুভূমিকভাবে স্থাপন করে নাট বোল্টের সাহায্যে মেঝের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে সংযুক্ত করে প্রাইমিং করার পর পাম্প চালু করা হয়।

পাম্পের ক্ষমতা নির্ধারণ পদ্ধতি

পাম্পের কার্যক্ষমতা : বায়ু তাড়িত পাম্পের কর্মদক্ষতা ২০% হতে ৪৫%। এ পাম্পের সাহায্যে ৬০ মিটার
উঁচুতে পানি তোলা যায়। কেন্দ্রাতিগ পাম্প দিয়ে বেশি পরিমাণ (প্রতি মিনিটে ৪৫০০ লিটার) পানি অনেক উঁচুতে তোলা সম্ভব। তা ছাড়া ১৮ মিটারের ওপরে পানি তুলতে বহু স্তর ব্যবস্থা করা উচিত। এর কর্মদক্ষতা ৫০% থেকে ৭০%। রেসিপ্রোকেটিং পাম্প খুব উঁচু কিন্তু পরিবর্তনীয় হেডে পানি তোলায় ব্যবহার করা হয়। তাবে উন্নত মানের বায়ু-তাড়িত পাম্প, জেট পাম্প ও কেন্দ্রাতিগ পাম্পের ছড়াছড়িতে রেসিপ্রোকেটিং পাম্পের ব্যবহার খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

পাম্প দিয়ে ট্যাংকে পানি উত্তোলনে অপচয়

পাম্প দিয়ে ট্যাংকে পানি উত্তোলন করতে অপচয় ঘটে। এতে দুই ধরনের অপচয় ঘটে থাকে। একটি ঘর্ষণজনিত অপচয় (Frctional Loss), অপরটি বেগ হেড অপচয় (Velocity Head Loss ) ঘর্ষণজনিত অপচয় থকবে প্রেরণ পাশে ও বেগ হেড অপচয় থাকবে আকর্ষণ পাশে। আকর্ষণ পাশে বেগ হেড অপচয় শুধু পানি আকর্ষণের সময় ঘটে, কিন্তু বেশি প্রভাব থাকবে না। ট্যাংকে পানি উত্তেলন করতে গিয়ে ঘর্ষণজ্ঞানিত অপচয়ের বেশি প্রভাব থাকে। আসলে ট্যাংকে প্রেরণ করতে গেলে প্রয়োজন হয় আকর্ষিত উত্তোলন ও প্রেরিত উত্তোলন। কিন্তু এ সময় ঘর্ষণজনিত অপচয় থাকার কারণে মোট হেড উত্তোলন হয়।
H=Hd+Hs+Hf
এখানে ঐ : মোট হেড উত্তোলন (m)
Hd : প্রেরিত উত্তোলন (m)
Hs: আকর্ষিত উত্তোলন (m)
Hs : ঘর্ষণজনিত অপচয়
পাম্প নির্বাচন করার জন্য মোট হেড উত্তোলনকে হিসাব করতে হয়। শুধু প্রেরিত উত্তোলন ও আকর্ষিত ইত্তোলন হিসাবে করলে ঘর্ষণজনিত অপচয়ের জন্য পাম্পের উত্তোলন ক্ষমতা কমে যাবে। ফলে পানি উত্তোলন করতে না পারার অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

অন্য পোষ্ট : hot water supply line - পানি গরম করার হিটার - গরম পানি সরবরাহ পদ্ধতি

ক) ঘর্ষণজনিত অপচয়

সূত্র Hf= x./d.v2/2g (m)
Hf : ঘর্ষণজনিত অপচয়
x : ঘর্ষণজনিত বাধার গুণাঙ্ক
1ঃ পাইপের দৈর্ঘ্য (m)
d :  পাইপের ব্যাস (m)
v2 পাইপের ভেতরে প্রবাহিত পানির বেগ (m/s) g) : অভিকর্ষ ত্বরণ

খ) বেগ হেড অপচয়

সূত্র Hv = vº/2g(m) Hv = বেগ হেড অপচয়
V2 = পাইপের ভেতরে প্রবাহিত পানির বেগ
g= অভিকর্ষ ত্বরণ
অপচয়জনিত প্রভাব
১। পাইপের গায়ের সাথে এর মাঝ দিয়ে প্রবাহিত পানির ঘর্ষণজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি যতখানি উঁচুতে ওঠা উচিত, ততখানে ওঠে না।
২। কোনো পাইপের পানি প্রবেশকালে বা পাইপ থেকে মজুদ জলাধারে পানি চলাকালে অথবা কোনো স্থানে পাইপের ব্যাস হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কারণে কিছু পরিমাণ হেড অপচয় হয়। এ সম্মিলিত অপচয়ই বেগ হেড অপচয়।

পাম্পের দক্ষতা নির্ধারণ

পাম্পের দক্ষতা নির্ধারণে দুটি বিষয়ে জানা প্রয়োজন। ১। প্রেরিত বা উত্তোলিত পানির পরিমাণ। প্রতি মিনিটে বা প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ পানি প্রেরণ বা উত্তোলন
করতে হবে, তা অনুসারে বের করতে হয়।
২। পানি প্রেরণ বা উত্তোলন করতে পাইপের দূরত্ব বা উচ্চতা বিবেচনা করতে হয়।
পাম্প চালাতে গেলে পাইপের ঘর্ষণঞ্জনিত অপচয় ঘটে, তাই প্রেরণ বা উত্তোলনের সময় ঘর্ষণজনিত অপচয়
এর জন্য দূরত্ব বা উচ্চতা যোগ করা হয়। ঘর্ষণজনিত অপচয় সূত্র বা তালিকার মাধ্যমে জানা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url