গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

 গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ
গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

গভীর নলকূপ (Deep Tube-well)

ভূ-গর্ভের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে লম্বভাবে খাড়া প্রোথিত পাইপ দিয়ে পানি তোলার পদ্ধতিকে টিউব ওয়েল বলে। টিউবওয়েলের গভীরতা যদি ২০ মিটারের বেশি হয়, তবে তাকে গভীর নলকূপ বলে। টিউবওয়েল যত গভীর, তার পানি তত ভালো। সেই আলোকের গভীর নলকূপ থেকে বেশি পানি পাওয়া যাবে এবং ভালো হবে। গভীর নলকূপের ব্যাস ৬" থেকে ৮" পর্যন্ত হয়ে থাকে। গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলতে যন্ত্রচালিত পাম্প ব্যবহার করা হয়। গভীর নলকূপ দিয়ে শহর এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। পাম্পটি ভূ-পৃষ্ঠতলের নিচে অবস্থিত থাকে।

পাম্পের শোষক পাইপটি নলকূপের পাইপের সাথে যুক্ত থাকে। সংযোগস্থলে একটি Valve থাকে। একে Relux Valve বা ফুট ভাল্ভ বলে। এ ভাল্ভ দিয়ে শুধুমাত্র নলকূপ থেকে পাম্পের দিকে পানি যেতে পারে, কিন্তু কখনও পাম্প হতে নলকূপে পানি আসতে পারে না। ডেলিভারি পাইপেও একটি Stop Valve লাগানো থাকে।
গভীর নলকূপের জন্য হাউজিং পাইপের প্রয়োজন হয়, যার ব্যাস সাধারণত ১০” থেকে ১৫" এবং পুরুত্ব ১/৪" হয়ে থাকে। এটিকে রিডিউসিং সকেট ও প্যাচের সাহায্যে মূল পাইপের সাথে লাগানো হয়।

পাম্পের সাকশন পাইপ ও ডেলিভারি পাইপ প্রয়োজনীয় কমাটিকাসহ স্থাপন করা হয়। সাকশন পাইপ দিয়ে পানি টেনে এনে এবং ডেলিভারি পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়।

গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

অন্য পোষ্ট : Machine Tools | doosan machine tools | Operation Trade

গভীর নলকূপের বিভিন্ন অংশের নাম ও বর্ণনা :

১/ ছাঁকনি : এটি শোষক পাইপে অগ্রভাগে থাকে। সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত এ অংশে পানি প্রবেশ করে।
পানি প্রবেশের সময় পানি স্তরে রক্ষিত মোটা দানার বালি এর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। এটি ফিল্টার
হিসেবে কাজ করে।
২/ সাকশন পাইপ : এটির মাধ্যমে পানি নলকূপ থেকে পাম্পে প্রবেশ করে, অর্থাৎ এ পাইপের মাধ্যমে পাম্প নলকূপ থেকে পানি শোষণ করে।
৩/ রিফ্লাক্স ভাল্ভ : এটি সাকশন পাইপ ও নলকূপের পাইপের সংযোগস্থলে থাকে, যার ফলে পাম্প
থেকে পানি নলকূপে ফিরে যেতে পারে না ।
৪/ পাম্প : যার মাধ্যমে সাকশন পাইপ দিয়ে পানি উত্তোলন করে ডেলিভারি পাইপের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করা হয়।
৫/  ডেলিভারি পাইপ : এটি পাম্পের উপর ভাগের অংশে অবস্থান করে পাম্প থেকে পানি গ্রহণ করে নির্গম পাইপের দিকে প্রবাহিত করতে সাহায্য করে।

গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

গভীর নলকূপ স্থাপন পদ্ধতি :

১. ক্যাবল টুল মেথড (Cable tool method)
২. রোটারি মেথড (Rotary method)
৩. জেটিং মেথড (Jetting method)
৪. ওয়াটার জেট মেথড (Water jet method)

মাটি অনুযায়ী এবং যে পরিমাণ পানি পাম্প করা যেতে পারে, ঐ অনুপাতে মোটামুটি ২৫-২৮ সেমি ব্যাসের কেসিং দিয়ে ৫০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত খনন করা সম্ভব। ফলে বড় মাপের স্ট্রেইনার এবং বেশি ক্যাপসিটি সম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করা সম্ভব। পাটি জেট পদ্ধতিতে খনন করে গভীর নলকূপ স্থাপনে নিচে লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলো :
(ক) শক্ত চটচটে অথচ পানিতে দ্রবণীয় মাটির ক্ষেত্রে তেপায়ার সাহায্যে কেসিং পাইপটিকে কাঁচা চৌবাচ্চার ওপর লম্বভাবে ধরে কেসিং পাইপের ভিতর দিয়ে একটি পানি জেট পাইপ এমনভাবে প্রবেশ করানো হয়, যাতে কেসিং পাইপ যে ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে, ঐ ভূমিতে গিয়ে ঠেকে। পানিজেট পাইপের নিচ প্রান্তে একটি নফল লাগানো থাকে এবং অপর প্রাপ্ত একটি পাম্পের সাথে যুক্ত থাকে। ঐ পাম্পের সাহায্যে পানি জেট পাইপ দিয়ে। সঙ্গোরে প্রবেশ করলে নজল মুখ দিয়ে তা সজোরে প্রক্ষিপ্ত হয় এবং কেসিং এর তলদেশের মাটিকে আলগা করে দেয়। তখন কেসিং পাইপটি তার নিজের বা তার ওপর দেয়া ওজনে এবং কেসটিকে রেষ্ণের সাহায্যে ঘোরানোর ফলে নিচের দিকে বসতে থাকে। মাটি ধোয়া ঘোলা পানি কেসিং ও ছোট পাইপের ফাঁকা দিয়ে ওপরে উঠে আসবে। ঐ ঘোলা পানি পরীক্ষা করে মাটির স্তরের নমুনা জানা যাবে।

(খ) যদি মাটির স্তর শক্ত হয় তবে কোর ড্রিলিং পদ্ধতিতে গভীর নলকূপ বসানো হয়। ড্রিল পাইপের নিচের অংশে ধারালো দাঁতওয়ালা ইস্পাতের ড্রিল বিট ও নজলযুক্ত কয়েকটি ছিদ্র পথ থাকে। ড্রিল পাইপটিকে কেসিং এর ভেতর খাড়াভাবে স্থাপন করে অপর প্রান্ত দিয়ে পাম্প করলে এবং ড্রিল পাইপটিকে রেঞ্চ -এর সাহায্যে। ঘোরালে ড্রিল বিট ও নজল মুখ দিয়ে বের হওয়া পানির ফোয়ারা পাদদেশের মাটি আলগা করে দেয় ও কটিতে থাকে। সাথে সাথে নিজের ওজনে বা চাপানো ওজনে কেসিং বসতে থাকে।


গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ


অন্য পোষ্ট : machine shop | machine shop flint | little machine shop

পানির স্তর :

ভূ-গর্ভস্থ পানি মাটির ভেতরে চুইয়ে চুইয়ে প্রবেশ করে। মাটিকে ক্রমশ রসসিক্ত করতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এ সম্পৃক্ত প্রক্রিয়া প্রথমে সর্বাপেক্ষা নিচের যে স্তর পর্যন্ত জল সরাসরি যেতে পারে সেখানে পৌঁছাবে এবং পরে ক্রমশ তা উপরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকবে। এরূপ ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সর্বাপেক্ষা উপরের সম্পৃক্ত তলটিকে ভূ-গর্ভস্থ পানিতল বলে।
এখানে একটি কথা স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, এ তলটির ওপর বায়ুমণ্ডল এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক। কোনো প্রকারে মাটি থেকে পানি তোলা হলে বা মাটির স্থানের পানি কম-বেশি হলে, ঐ ভলটিও ওঠানামা করবে। এ তলটি কখনই স্থির থাকে না।

ভূ-গর্ভস্থ মৃত্তিকার যে স্তরে পানি জমা থাকে, তাকে পানি ধারক স্তর বলে। বস্তুত এ স্তরটিই ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রাকৃতিক আধার। যে স্তরে বালি আর গ্রাভেল প্রচুর পরিমাণে থাকে, ঐ স্তর সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট পানি ধারক স্তর। প্রচুর পরিমাণ মোটা দানার বালি সম্বলিত স্তরটিও পানি ধারণের পক্ষে বেশ উপযোগী। কাদামাটি যদিও বেশ ছিদ্রময়, তা মিহি দানার বলে পানির পক্ষে অপ্রবেশ্য। বালি আর গ্রাভেল ছাড়া যে স্তরে বেলে পাথর থাকে এটাও ভালো পানি ধারক স্তর। এতে চুনা পাথর বা মার্বেলযুক্ত স্তরে সরু ফাটল থাকায় পানি সহজে প্রবেশ করে।

অনেক সময় সমুদ্রপৃষ্ঠ অপেক্ষা অনেক উঁচুতে পাহাড় ৮০-৯০ মিটার ভূ-গর্ভে সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণত ঐসব স্থানে পানি পাওয়ার কথা নয়। পাহাড় বা পার্বত্য অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন শিলার সরু ফাটল ইত্যাদির ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি অথবা বরফ গলা পানি অনুপ্রবেশ করে, পরে তা কোনো বড় আকারের কঠিন শিলা-স্তরে জমা হতে থাকে। ঐ শিলা স্তরের উপর সঞ্চিত পানির সর্বোচ্চ তলকে সীমাবদ্ধ পানিতল বলে। সঙ্গত কারণেই এ পানির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম ও সীমিত। 


গভীর নলকূপ বসানোর নিয়ম - ভূগর্ভস্থ পানির স্তর - নলকূপ

গভীর নলকূপ মেরামত পদ্ধতি :

নতুন ননুকুপে পাম্পিং আরম্ভ করা হলে ছাঁকনি বা স্ট্রেইনারের চার দিকে সূক্ষ্ম বালুকণা সঞ্চারণ করে। সূক্ষ্ণ বালিকণার পরিমাণ বেশি হলে এগুলো উঠিয়ে ফেলতে হয়। সূক্ষ্ম বালি কণা স্ট্রেইনারের ছিদ্রপথ বন্ধ করে দিতে পারে। তাছাড়া অনুপ্রবেশকারী কিছু মাটিকণা ছিদ্র পথে আটকে যায় এবং স্ট্রেইনারের বহিরাবরণে চুনের প্রলেপ পড়ে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাম্পের ইমপেরিয়ালের মাঝে মাটি বা পাথরের টুকরো ঢুকতে পারে। এসব কারণে ছিদ্রমুখে আবদ্ধ পদার্থকে অপসারণ করতে নিচে লিখিত ব্যবস্থা নেয়া হয় :
১/ পাম্প-এর সাহায্যে পনি জোরে চালনা করা হয়। ফলে আবদ্ধ মাটিকণা ছিদ্রমুখ থেকে অপসারিত
করা হয়।
২/ পাম্প উঠিয়ে চেক করে পরিষ্কার করে পুনরায় স্থাপন করতে হয়।
৩/ অপসারণ করে পাম্পের সাহায্যে পানি পাম্প করে হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে শোষক পাইপের পানি
৪/ হাইড্রোলিক এসিড ঢেলে দিয়ে চুনের আস্তরণ গলিয়ে অপসারিত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url