টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

 টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর
টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

টিউবওয়েল (Tube-Well) বা নলকূপ

পানি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তুর অন্যতম। পানি শুধু পানীয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। রান্নাবান্না করা, গোসল করা, ধোয়া-মোছা এবং প্রস্রাব-পায়খানায় ব্যবহারের জন্যও প্রচুর পানির প্রয়োজন। গৃহস্থালির ব্যবহার ছাড়াও অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষাঙ্গন, হাসপাতাল, বাগান, চাষাবাদ, আগুন নেভানো ইত্যাদি। সকল জায়গায় পানি ব্যবহৃত হয়। ভূ-পৃষ্ঠের পানি দিয়ে একা এই চাহিদা মেটানো যায় না বলে ভূ-গর্ভস্থ পানিকেও কাজে লাগানো হয়। ভূ-গর্ভের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে লম্বভাবে খাড়া প্রোথিত পাইপ দিয়ে পানি তোলার পদ্ধতিকে টিউবওয়েল বা নলকুপ বলে।

টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

টিউবওয়েলের গভীরতার ওপর নির্ভর করে একটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা :

(ক) অগভীর নলকূপ (Shallow Tube well)
(1) গভীর নলকূপ (Deep Tube well) ২০ মিটারের চেয়ে কম গভীর হলে বলা হয় অগভীর টিউবওয়েল এবং ২০ মিটার অপেক্ষা গভীর হলে বলা গভীর টিউবওয়েল। সাধারণত বলা হয় “টিউবওয়েল যত গভীর, তার পানি ততই ভালো।" এ কথা সব সময় সত্য হয় না। টিউবওয়েল বসানোর সময় বালি মিশ্রিত যে ঘোলা পানি ওঠে, ঐ বালির দানা দেখেই অভিজ্ঞ কারিগর বলে দিতে পারেন উপযুক্ত স্তর পাওয়া গেছে কিনা। অগভীর টিউবওয়েলের ব্যাস ১.৫ ইঞ্চি হতে ৪ ইঞ্চি (৪০মি.মি. হতে ১০০ মি.মি.) এবং গভীর টিউবওয়েলের ব্যাস ৬ ইঞ্চি হতে ৮ ইঞ্চি (১৫০ মি.মি. হতে ২০০ মি.মি.) পর্যন্ত হয়ে থাকে।

অন্য পোষ্ট : পানির পাম্প - পাম্প কত প্রকার - air lift pump - classification of pumps

নলকূপের বিভিন্ন অংশ নলকূপের বিভিন্ন অংশগুলো নিচে দেওয়া হলো :

১. বেল গ্লাগ (Bail Plug) ২. ব্ল্যাঙ্ক পাইপ (Blank Pipe)
৩. স্ট্রেইনার পাইপ (Strainer Pipe)
৪. ৰূপের মূল পাইপ (Main Pipe)
৫. সাধারণত হ্যান্ড পাম্প।

স্ট্রেইনার পাইপের ছিদ্রগুলো এমনভাবে সাজানো এবং এমন আকারের হয়, যাতে পানি ধারক স্তরে বিদ্যমান অধিকাংশ মোটা দানার বালি, পানির সাথে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে এবং পানি অধিক বেগে পাইপের মাঝে অনুপ্রবেশ করলেও পানি ধারক স্তরের কণাগুলোর কোন স্থানচ্যুতি না ঘটে। পানি ধারক স্তরে মিহি দানার বালির পরিমাণ বেশি হলে স্ট্রেইনার পাইপের বাহির পাশে গা ঘেঁসে প্রাভেল, নুড়ি ইত্যাদি বিছিয়ে দিতে হয়। এ পদ্ধতিকে শ্রাউডিং করা বলে। পাইপের ওপরে একটি পাম্প লাগানো থাকে। এ পাম্পের সাহায্যে পাইপের পানি ওপরে টেনে তোলা হয়। এতে স্ট্রেইনার পাইপের ছিদ্রপথ দিয়ে কিছু মিহি দানার বালি পানির সাথে পাইপে প্রবেশ করে। এর বেশিরভাগ অংশই ভাসমান অবস্থায় পানির সাথে ওপরে উঠে আসে এবং বাকি অংশ নিচে ব্ল্যাঙ্ক পাইপের ভিতরে থিতিয়ে পড়ে। গ্যালভানাইজড লোহা বা পিতল, সংকর ধাতু ইত্যাদি দিয়ে স্ট্রেইনার পাইপ তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেইনার আমাদের দেশে পাওয়া যায়, যথা- জনসন স্ট্রেইনার, কুকস স্ট্রেইনার, ব্রাউনিয়া স্ট্রেইনার ইত্যাদি।
সাধারণত হ্যান্ড পাম্পের সাহায্যে ১.৫ ইঞ্চি ৩৮ মিমি ব্যাসের টিউব ওয়েল হতে প্রতি মিনিটে প্রায় ৫ গ্যালন ১৩ লিটার পানি প্রায় ২৪ ফুট উপরে টেনে তোলা যায়। এ সব টিউবওয়েলের স্ট্রেইনার ভূ-পৃষ্ঠ হতে কম,পক্ষে ৫০ পুট নিচে দেয়া হলে ঐ পানি পান করার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কেননা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৫০ ফুটের মধ্যবর্তী পানিধারক স্তরের পনি ভূ-পৃষ্ঠের দূষিত পানি প্রবাহ দিয়ে দূষিত হতে পারে।
টিউব ওয়েল হতে বেশি পানি তুলতে হলে সাধারণত হাতে চালিত পাম্পের পরিবর্তে যন্ত্রচালিত পাম্প ব্যবহার
করা উচিত। এক্ষেত্রে টিউবওয়েলটি অন্তত ৬০ মি গভীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটির টিউব ওয়েল দিয়ে শহরে
পানি সরবরাহ করা যায়। পাম্পটি ভূ-পৃষ্ঠ তলের নিচে অবস্থিত থাকে।
পাম্পের শোষক (Suction) পাইপটি টিউবওয়েল এর পাইপের সাথে যুক্ত। সংযোগস্থলে একটি কপাটিকা (Valve) আছে। একে রিফ্ল্যাক্স ভাল্‌ভ (Valve) বা ফুট ভালভ (Valve) বা পাদ কপাটিকা বলে। এ ভাল্ভ দিয়ে শুধুমাত্র টিউবওয়েল থেকে পাম্পের দিকে পানি যেতে পারে, কিন্তু কখনও পাম্প হতে টিউবওয়েলে পানি আসতে পারে না। ডেলিভারি পাইপেও (Delivery Pipe) এটি স্টপ ভাল্‌ভ (Stope Valve) লাগানো থাকে।
মূল পাইপ স্ট্রেইনার ও ব্লাইন্ড পাইপ একই ব্যাসের হবে। মূল পাইপটি জি, আই স্টীলের, পি.ভি.সি আবার বাঁশেরও হতে পারে। এটির ব্যাস টিউবওয়েলের শ্রেণি ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ১.৫ ইঞ্চি হতে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পি.ভি.সি ও বাঁশের নল দিয়ে তৈরি টিউব ওয়েল কম দামে বসানো যায়, কিন্তু এর স্থায়িত্বকাল কম। আবার উঠানোও যায় না। জি আই বা স্টিলের পাইপ দিয়ে বসানো টিউবওয়েল উঠিয়ে আবার স্থাপন করা যায়। গভীর টিউব ওয়েল এর জন্য হাউজিং পাইপের প্রয়োজন হয়। সাধারণত ১০ ইঞ্চি হতে ১৫ ইঞ্চি ব্যাসের হয়ে থাকে। এর পুরুত্ব ১/৪ ইঞ্চি হয় এবং রিডিউসিং সকেট ও প্যাচের সাহায্যে মূল পাইপের সাথে লাগানো হয়। টিউব ওয়েল হতে পানি তুলতে হাতে চালিত পাম্প বা যন্ত্র চালিত পাম্প বসানো হয়।
ক. সেন্ট্রিফিউগ্যাল পাম্প
খ. টারবাইন পাম্প।
যন্ত্র চালিত পাম্প দুই প্রকার হয়ে থাকে।
যেমন: পাম্প ভূ-পৃষ্ঠে বা ভূ-পৃষ্ঠের নিচেও বসানো যায়। পাম্পের সাকশন পাইপ ও ডেভিভারী পাইপ প্রয়োজনীয় কপাটিকাসহ স্থাপন করা হয়। সাকশন পাইপ দিয়ে পাম্প পানি টেনে আসে এবং ডেলিভারী পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়।


টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

টিউবওয়েল খনন পদ্ধতি সমূহ (Methods of Sinking or Boring Tube-well)

টিউব ওয়েল বসানোর দুটি প্রধান ধাপ হলো
(ক) প্রয়োজনীয় গভীরতাসম্পন্ন বোর গর্ত খনন।
(খ) মূল পাইপ ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ঐ বোর গর্তে স্থাপন। প্রথম ধাপটি সবচেয়ে বেশি সমস্যপূর্ণ, জটিল এবং এটি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে সম্পন্ন করা যায়। গর্ত কাটার পদ্ধতিতে প্রথম টিউবওয়েল পাইপের ব্যাস অপেক্ষা বড় ব্যাসের একট গর্ত কাটা হয়। এ গতটি মাটি থেকে ঠিক খাড়াভাবে কাটা হয়। বড় ব্যাসের মোটা পাইপগুলোকে বলা হয় কেসিং। প্রয়োজনীয় গভীরতা পর্যন্ত কেসিং নামানোর পর স্ট্রেইনারসহ টিউবওয়েলের পাইপগুলোকে একটার পর একটা জোড়া দিয়ে কেসিং-এর গর্তের ভেতরে নামিয়ে দেয়া হয়। এর পর বাইরের কেসিংটি তুলে ফেলা হয়। এ নিয়মে যে কোন গভীরতা পর্যন্ত টিউবওয়েল বসানো যায়। স্থান, কাল পাত্রভেদে টিউবওয়েল খনন করার নিচে লিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হয়। যেমন :

 ক. ঢেকি পদ্ধতি (Lever System Boring)
খ. ঘূর্ণি খনন পদ্ধতি (Rotary Boring Method)
গ. অন্তঃকর্তন পদ্ধতি (Core Drilling Method)
ঘ. পানি জেট পদ্ধতি (Water Jet Method)
ঙ. প্রক্ষেপণ পদ্ধতি (Plunger System)
চ. খনন পদ্ধতি (Sludger System)


অন্য পোষ্ট : পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য

ঢেঁকি পদ্ধতিতে খনন (Lever System of Boring) 

ছোট ছোট বাড়িঘরে ব্যবহৃত অভীর নলকূপ খনন কাজে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পদ্ধতিটি খুবই সুন্দর ও সহজ। প্রথম যেখানে নলকূপ বসবে, সেখান ৪ ইঞ্চি (১০ সে.মি.), ব্যাসের ৩ ফুট (৯০ সে.মি.) গভীর একটি গর্ত খোড়া হয়। ঐ গর্তের একপাশে একই গভীরতায় প্রায় ৩ ফুট X ৩ ফুট (৯০ সে.মি. x ৯০ সে.মি.) একটি কাঁচা চৌবাচ্চা কেটে চৌবাচ্চা ও গর্তের মাঝে পানি চলাচলের পথ কেটে দেয়া হয়।

গর্ভের যে পাশে চৌবাচ্চা থাকতে তার বিপরীত পাশে ১০-১৫ ফুট (৩-৫ মিটার) উঁচু বাঁশের একটি মাচা তৈরি করা হয়। প্রথমে চৌবাচ্চাটিকে কানায় কানায় পানি ভর্তি করা হয় এবং পরে একটি পাইপ গর্তের ভেতরে খাড়াভাবে ধরে সম্পূর্ণরূপে পানি ভর্তি করার সাথে সাথে তার ওপরে হাত চাপা দিতে হয়। ফলে পাইপের বাতাস পাইপের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না বলে পাইপের পানি নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায় না। মাচার উপর দাঁড়িয়ে হাত চাপা দিতে হয়। এবার অপর কর্মী মাচার নিচে দাঁড়িয়ে একটি বেঞ্চ এর মাঝ স্থান যাচার বাঁশের সাতে ঢেঁকির মতো বেঁধে বেঞ্চ-এর সামনের ভাগের শিকল দিয়ে পাইপটিকে বাঁধবেন এবং ঐ বেঞ্চের সাহায্যে পাইপটিকে খাড়াভাবে কিছুটা তুলে আবার খাড়াভাবে ছেড়ে দিতে হবে। পাইপ ওপরে উঠানোর সময় অবশ্যই এর ওপরের মুখ হাত চাপা দিয়ে বন্ধ করতে হতে। এতে পাইপটি যতখানি ওপরে উঠবে, পাইপের মাটি সংলগ্ন মুখে ততখানি স্থানে আংশিক শূণ্যস্থান সৃষ্টি হবে এবং তার পাশের আলগা মাটি ও পানি দ্রুতবেগে এসে ঐ শূন্যস্থান পূরণ করবে। পরে যখন পাইপনি নামানো হবে, তখন ঐ আলগা মাটি ও পানি পাইপের ভিতরে প্রবেশ করে সেখানে যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে, তা দিয়ে পাইপের বাইরের মুখের উপর চাপা দেয়া হতা ঠেলে পাইপের ভিতরের ঘোলা পানি ফোয়ারার মত বাইরে উপচে পড়বে। এভাবে কয়েকবার পর পর এক নাগাড়ে উঠা নামা করলে দেখা যাবে, পাইপটি নিচের দিকে বসতে আরম্ভ করছে। ফোয়ারা আকারে উপচিয়ে পড়া ঘোলা পানির মাটি পরীক্ষা করে অভিজ্ঞ কর্মী বলতে পারবে কোন স্তর দিয়ে পাইপটি যাচ্ছে। এভাবে প্রয়োজনীয় গভীরতা পর্যন্ত পাইপগুলো বসিয়ে আবার সেগুলো ভুলে ফেলতে হবে এবং পরে টিউব ওয়েলের মূল পাইপ এর সাথে আনুষঙ্গিক অংশগুলো যথাযথ জোড়া লাগিয়ে ঐ বোর গর্ভে এক এক করে নামিয়ে দিতে হবে। সবশেষে, টিউব ওয়েলের সাথে হাতে চালিত পাম্প (Hand Pump) লাগিয়ে পাম্প করলে ভেতরের পানি উঠে আসবে। কিছুক্ষণ পাম্প করার পর দেখা যাবে আগত পানি ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে আসছে এবং যতক্ষণ পুরোপুরি পরিষ্কার পানি না আসে ততক্ষণ এভাবে পাম্প করতেহবে।


টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

পানি জেট পদ্ধতিতে খনন (Water Jet Method Boring) 

পানি জেট পদ্ধতিতে পাম্পিং সরঞ্জামাদি দিয়ে বেশ কিছু গভীরতায় দ্রুতভাবে খনন কাজ সম্পাদন করা যায়। মাটি অনুযায়ী এবং যে পরিমান পানি পাম্মপ করা যেতে পারে, ঐ অনুপাতে মোটামুটি ২৫-২৮ সেন্টিমিটার ব্যাসের কেসিং দিয়ে ৫০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত খনন কাজ চালানো যেতে পারে, যার ফলে বড় মাপের স্ট্রেইনার এবং বেশি ক্যাপাসিটটির পাম্প ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

শক্ত চটচটে, অথচ পানিতে দ্রবণীয় মাটির ক্ষেত্রে এবং বেশি গভীরতা পর্যন্ত বোর গর্ভ খনন করতে এ পদ্ধতি অধিকতার উপযোগী। তেপায়ার সাহায্যে কেসিং পাইপটিকে কাঁচা চৌবাচ্চার ওপর লম্বভাবে ধরে কেসিং পাইপের ভেতর দিয়ে একটি পানি ভোট পাইপ এমনভাবে প্রবেশ করিয়ে দিতে হয় যে, ঐ পাইপের এক প্রান্ত কেসিং পাইপ যে ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে, ঐ ভূমিতে গিয়ে ঠেকে। পানি-জেট পাইপের ঐ প্রান্তে একটি নজল (Nozzle) লাগানো থাকে এবং অপর প্রান্ত একটি পাম্পের সাথে যুক্ত থাকে। ঐ পাম্পের সাহায্যে পানি ভোট পাইপের মাটিকে আলগা করে দেবে। তখন কেসিং পাইপটি তার নিজের বা তার ওপর দেয়া ওজনের ভারে এবং কেসিংটিকে রেষ্ণের সাহায্যে ঘোরানোর ফলে তা নিচের দিকে বসতে আরম্ভ করবে। মাটি-ধোয়া ঘোলা পানি কেসিং পাইপ ও স্লেট পাইপের মাঝের ফাঁক দিয়ে ওপরে উঠে আসতে। ঐ ঘোলা পানি পরীক্ষা করে। মাটির স্তরের নমুনা জানা যাবে।

এ ছাড়াও শক্ত ভূ-স্তরের ক্ষেত্রে কোর ড্রিলিং পদ্ধতিতে টিউবওয়েল বসাে এক্ষেত্রে পানি জেট পাইপের পরিবর্তে ড্রিল পাইপ ব্যবহার করা হয়। ড্রিল পাইপের নিচের অংশে ধারালো দাঁতগুলো ইস্পাতের ড্রিল-বিট ও নজলযুক্ত কয়েকটি ছিদ্রপথ থাকে। ড্রিল পাইপটিকে কেসিং পাইপের ভেতর খাড়া এবং লম্বভাবে স্থাপন করে। অপর প্রান্ত দিয়ে পানি পাম্প করা হয় এবং ড্রিল পাইপটিকে রেঞ্চ এর সাহায্যে ঘোরানো হয়, ফলে ড্রিল বিট ও নজল মুখ দিয়ে বের হওয়া পানির ফোয়ারা পাদদেশের মাটি আলগা করে দেবে ও কাটতে থাকে। সাথে সাথে চাপানো ওজন বা নিজের ওজনে কেসিং পাইপটিও বসতে থাকবে। এটি মূলত পানি জেট পদ্ধতি ও ঘূর্ণি পদ্ধতির মিশ্রণ।

কেসিং বসানোর সময়ে তা ঠিকভাবে খাড়া নামছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রতি বছর বালির নমুনা দেখে নিতে হবে এবং তা সংগ্রহ করে রাখতে হবে। বসানোর সময় টিউবওয়েল কেসিং-এর ভেতর নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের স্ট্রেইনার দেয়া হল কি না, প্রতিটি জোড়া ঠিকভাবে করা হল কি না ইত্যাদি কাজ তত্ত্বাবধায়ক দেখে নেবেন।


টিউবওয়েল - নলকূপ - নলকূপ মেকানিক কাজ কি - পানির স্তর

ঘূর্ণি পদ্ধতি (Rotary borring method)

নরম অথচ আঠালো মাটিতে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। এ পদ্ধতিতে বোর গর্ত করার ধাপগুলো নিম্নরূপঃ
১/ টিউব-ওয়েল স্থাপনের জায়গায় ২ ফুট x ২ ফুট (৬০ সে.মি. x ৬০ সে.মি. ) এবং ৩ ফুট (৯০ সে.মি.) গভীর কাঁচা চৌবাচ্চা খনন করা হয়।
২/  টিউবওয়েলের কেন্দ্রস্থল বরাবর কপিকল ঝুলাতে গর্তকে মাঝখানে রেখে তেপায়া বিশিষ্ট
৩/ মূল টিউবওয়েল পাইপের সমান বা তা অপেক্ষা বেশি ব্যাসের বোর কাটার (Cutter), যার নিচের
অংশে বোর পাইপ অপেক্ষা অধিক ব্যাস বিশিষ্ট ভারী কাটিং স্যু লাগাতে হয়। এটি কপি কলের সাহায্যে খাড়া করে বেঞ্চ দিয়ে ঘোরাতে হয়। জেট বোরিং তখনই শুরু করা হয়, যখন পাম্প করা পানি বোরিং পাইপের ভেতরে সজোরে দেয়া হয়।
৪/ ঘোরানোর ফলে কাটিং স্যু মাটিতে কাটতে কাটতে অগ্রসর হয় এবং ধীরে ধীরে বোর পাইপটিও
বসতে আরম্ভ করে।
৫/ বোর পাইপের মাঝ দিয়ে পাম্পের সাহায্যে যত বেশি পরিমাণ পানি পাম্প করা হবে, পাইপও তত দ্রুত গতিতে ভূ-গর্ভে বসতে আরম্ভ করবে। এ পানি কাটিং স্যুর মাঝের ফাঁকা জায়গা দিয়ে চৌবাচ্চায় উঠে আসে। ঐ কাদা মিশ্রিত পানি পরীক্ষা করে পাইপটি কোন স্তরে গিয়েছে বোঝা যায়।
৬/  খুব অল্প সময়ের মাঝেই প্রথম ৬ মিটার দৈর্ঘ্যের বোর পাইপ প্রায় ভূমিতলের কাছে পৌঁছে যায়। এরপর কাটিং স্যু তুলে ফেলা হয় এবং দ্বিতীয় বোর পাইপটি প্রথম বোর পাইপের সাথে যুক্ত করা হয়। এই দ্বিতীয় পাইপের প্রান্তে কার্টিং স্যু পুনরায় ফিট করা হয় এবং পাম্পিং শুরু করে আবার জেটিং প্রক্রিয়া আরম্ভ করা হয়। এভাবে একের পর এক বোর পাইপ জোড়া দিয়ে খনন কাজ চালানো হয়, যতক্ষণ না প্রয়োজনীয় গভীরতায় পৌঁছায়।
৭/ বোর গর্তে শেষ হলে সকল বোর পাইপ উঠাতে হবে।
৮/ এবার মূল টিউবওয়েল-এর পাইপগুলোর সাথে বেল প্লাগ, ব্ল্যাঙ্ক পাইপ, স্ট্রেইনার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ফিটিংস যথাস্থানে সংযোগ করে একটি একটি করে বোর গর্ভে নামানো হয়।
৯/ সব পাইপ নামানো শেষ হলে ভূ-পৃষ্ঠে হতে ১ ফুট ওপরে হ্যান্ড পাম্প দিয়ে পরিষ্কার পানি না আসা পর্যন্ত পাম্প করে পাইপের ভেতরের পানি ফেলে দেয়া হয়।
১০/ টিউবওয়েল-এর চারদিকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ মেঝে তৈরি করে দেয়া হয়।

অন্য পোষ্ট : angle valve | Gate Valve,check valve | air relief valve | drain valve, globe valve

পানির স্তর

ভূ-গর্ভস্থ পানি মাটির ভেতরে চুইয়ে চুইয়ে প্রবেশ করে। মাটিকে ক্রমশ রসসিক্ত করতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এ সম্পৃক্ত প্রক্রিয়া প্রথমে সর্বাপেক্ষা নিচের যে স্তর পর্যন্ত জল সরাসরি যেতে পারে সেখানে পৌঁছাবে এবং পরে ক্রমশ তা ওপরের দিকে এগিয়ে আসতে থাকবে। এরূপ ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সর্বাপেক্ষা ওপরের সম্পৃক্ত তলটিকে ভূ-গর্ভস্থ পানিতল বলে। এখানে একটি কথা স্মরণ রাখা আবশ্যক যে, এ তলটির ওপর বায়ুমন্ডল এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক। কোনো
প্রকারে মাটি থেকে পানি তোলা হলে বা মাটির স্থানের পানি কম বেশি হলে, ঐ তলটিও উঠানামা করবে। এ
তলটি কখনই স্থির থাকে না।
ভূ-গর্ভস্থ মৃত্তিকার যে স্তরে পানি জমা থাকে, তাকে পানি ধারক স্তর বলে। বস্তুত এ স্তরটিই ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রাকৃতিক আধার। যে স্তরে বালি আর গ্রাভেল প্রচুর পরিমাণে থাকে, ঐ স্তর সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট পানি ধারক স্তর। প্রচুর পরিমাণ মোটা দানার বালি সম্বলিত স্তরটিও পানি ধারণের পক্ষে বেশ উপযোগী। কাদা মাটি যদিও বেশ ছিদ্রময়, তবুও তা মিহি দানার বলে পানির পক্ষে অপ্রবেশ্য। বালি আর গ্রাভেল ছাড়া যে স্তরে বেলে পাথর থাকে এটাও ভাল পানি ধারক স্তর। এতে চুনা পাথর বা মার্বেলযুক্ত স্তরে সরু ফাটল থাকায় পানি সহজে প্রবেশ করে

অনেক সময় সমুদ্র পৃষ্ঠ অপেক্ষা অনেক উঁচুতে পাহাড় ৮০-৯০ মিটার ভূ-গর্ভে সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সাধারণত ঐ সব স্থানে পানি পাওয়ার কথা নয়। পাহাড় বা পার্বত্য অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন শিলার সরু ফাটল ইত্যাদির ভেতর দিয়ে বৃষ্টির পানি অথবা বরফ গলা পানি অনুপ্রবেশ করে, পরে তা কোনো বড় আকারের কঠিন শিলাস্তরে জমা হতে থাকে। ঐ শিলা স্তরের উপর সঞ্চিত পানির সর্বোচ্চ ভলকে সীমাবদ্ধ পানিতল বলে। সঙ্গত কারণেই এ পানির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম ও সীমিত।

টিউবওয়েলের মেরামত কাজ

কূপ যে পদ্ধতিইে খনন করা হোক না কেন, নতুন স্থাপনের পর বিবর্ধন অপরিহার্য। নতুন রূপে পাম্পিং আরম্ভ করা হলে স্ট্রেইনারের চারদিকের সূক্ষ্ণ বালুকণা সঞ্চারণ করে এবং অনেক সময় সূক্ষ্ম বালুকণার পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এদের উঠিয়ে ফেলতে হয়। সূক্ষ্ম বালুকণা স্ট্রেইনারের ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেয়। ফলে, পাইপে পানি আসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। চার-পাঁচ বছরের পুরনো হলে অনেক টিউব ওয়েলে পানি উঠা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর মূল কারণ হলো স্ট্রেইনার পাইপের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় পাম্প করার ফলে পানির সাথে অনুপ্রবেশকারী কিছু মাটি কণা ছিদ্র মাঝে আটকে যায়। এ ছাড়া স্ট্রেইনার পাইপের বহিরাবরণে চুনের প্রলেপ পড়তে আরম্ভ করে এবং পরবর্তীকালে একটা সরু আস্তরণ সৃষ্টি করে স্ট্রেইনার পাইপের ছিদ্র পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। ছিদ্রমুখে আবদ্ধ এ সব পদার্থকে অপসারণ করতে নিচে লিখিত উপায়গুলো অবলম্বন করে পানির প্রেসার বাড়ানো যায় :

১/ টিউব ওয়েল এর ভেতর দিয়ে পাম্প এর সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি ধারক স্তরে পানি বা বায়ু জোরে চালনা করলে আবদ্ধ মাটিকণা আলগা হয়ে ছিদ্রমুখ থেকে অপসারিত হয়ে যায়।
২/ ফুট ভাল্‌ভ বিহীন কোন টারবাইন পাম্প এর সাহায্যে টিউব ওয়েল থেকে পানি পাম্প করতে করতে হঠাৎ বন্ধ করে দিলে শোষক পাইপ (Suction Pipe) এর পনি বিপরীতক মুখে ধাবিত হয়ে স্ট্রেইনার পাইপের ছিদ্রের ভিতের দিয়ে পানি-ধারক স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করে ও ফলে ছিদ্র পথে আবদ্ধ কণাগুলো অপসারিত হয়ে যায়।
৩/ উঁচুতে বানানো কোন Tank-এর সাথে টিউবওয়েল এর সরাসরি সংযোগ করলে ঐ Tank-এর পানি অভিকর্ষ টানে ও চাপে সবেগে টিউবওয়েল এর ভেতর দিয়ে পানি ধারক স্তরে প্রবেশ করে, ফলে বালি কণাগুলো অপসারিত হয়ে যায়।
৪/ একটি প্লানজার (Plunger) কে টিউব ওয়েল পাইপের ভেতর দিয়ে সজোরে করলে টিউবওয়েল এর

পানি বিপরীত দিকে সবেগে ছিদুমুখ দিয়ে পানি-ধারক স্তরে প্রবেশ করে, ফলে ধূলিকণা স্ট্রেইনার থেকে অপসারিত হয়।
৫/ স্ট্রেইনার পাইপের বহিরাবরণে চুনের আস্তরণ পড়লে, হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI) টিউবওয়েল
এর ভেতরে ঢেলে দিলে চুনের আস্তরণ গলে অপসারিত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url