পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য

 পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য
পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য

সরবরাহ লাইনে প্রবাহের তারতম্য

কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় পানি করার পূর্বে ঐ এলাকার মোট চাহিদা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা আবশ্যই দরকার। কারণ মোট চাহিদার ওপর ভিত্তি করেই পানি সরবরাহ ইউনিটের আকার ও আয়তন নির্ধারণ করা হয়। এ কাজে নিচে লিখিত দুটি বিষয়ের সাহায্য নেয়া যেতে পারে
(১) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সম্ভাব্য জনসংখ্যার পরিমাণ।
(২) দৈনিক মাথাপিছু পানি সরবরাহের হার।
বিভিন্ন ঋতুতে কিংবা সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে, এমনকি দিনের বিভিন্ন সময়ে পানির চাহিদার তারতম্য হতে দেখা যায়। দৈনন্দিন চাহিদার চেয়ে উৎসবের দিনে পানির চাহিদা বেশি বেড়ে যায়। শীতকালের চেয়ে গ্রীষ্মকালে পানির চাহিদা বেশি থাকে। পানি ব্যবহারের তারতম্যকে নিম্নলিখিতভাবে প্রকাশ করা যায় :
সর্বোচ্চ দৈনিক প্রবাহ= ১.৫ হতে ২.০ × গড় দৈনিক প্রবাহ। সর্বোচ্চ ঘণ্টায় প্রবাহ= ২.০ হতে ৩.০ x গড় ঘণ্টায় প্রবাহ অথবা ২.০ x সর্বোচ্চ দৈনিক প্রবাহ।

প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয়

কোন প্রবাহী (Fluid) এক স্থান হতে অপরস্থানে পাইপ, নালা (Channel), খাল (Canal) ইত্যাদির মাধ্যমে অবিচ্ছিন্নভাবে স্থানান্তরিত হলে তাকে প্রবাহীর প্রবাহ (Flow of Fluid) বলে। বাইরের কোনো বল প্রয়োগ ছাড়াই উঁচু স্থানের প্রবাহী নিচু স্থানে প্রবাহিত হয়। কিন্তু নিচু হতে উঁচু স্থানে প্রবাহীকে পাঠাতে বাহ্যিক বল প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়। পাম্পের সাহায্যে তরলকে স্থানান্তর বা উত্তোলন করা যায়। কিন্তু গ্যাস জাতীয় প্রবাহীকে স্থানান্তর করতে কম্পেসার ব্যবহার করা হয়।

কোনো পাইপ বা পাইপ জাতীয় পথের একটি নির্দিষ্ট অংশের মাঝ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত তরলের পরিমাণকে নির্গমনের হার বা নির্গমন বলে। এটি সাধারণত Q দিয়ে প্রকাশ করা হয়। পাইপ বা কোনো নালার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত তরল পদার্থের বেগ ঐ পাইপ বা নালার প্রস্থচ্ছেদের সকল বিন্দুতে সমান থাকে না। তরলের বেশ পাইপের কেন্দ্রে বেশি এবং পরিধির দিকে কম থাকে। কিন্তু ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পাইপের ব্যাসকে সুষম ধরে নেয়া হয়।

মনে করি, A বর্গমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট একটি পাইপের ভেতর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে V মিটার বেগে তরল (পূর্ণ অবস্থায়) প্রবাহিত হচ্ছে। প্রবাহিত তরলের নির্গমনের পরিমাণ= AV3 মি./ সেকেন্ডে, অর্থাৎ Q=AV ঘন মিটার প্রতি সেকেন্ডে। কোনো পাইপ বা নালার ভেতর দিয়ে প্রবাহী প্রবাহিত হওয়ার সময়ে ঐ পাইপ বা নালার প্রতিটা অংশের মাঝ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে একই ওজনের প্রবাহী প্রবাহিত হলে ধারাবাহিকতায় নির্গমনের পরিমাণ Q= AV] =A2V2..... ........ ইত্যাদি।


অন্য পোষ্ট : lead pipe rigidity | how to cut copper pipe | corrugated plastic pipe

পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য

বিভিন্ন কারণে পানি প্রবাহের তারতম্য

পাইপের বাঁক, ব্যাসের পরিবর্তন, উচ্চতার তারতম্য, ফসেট ও ওয়াটার মিটার ব্যবহারের ফলে প্রবাহিত তরলের নির্গমনের পরিমাণের তারতম্য ঘটে। তরল পদার্থ পুরোপুরি মসৃণ এবং একই সরল পথ দিয়ে প্রবাহিত হলে সান্দ্রতা (Viscosity) ছাড়া অপর কোনো কারণে বাধার সম্মুখীন হয় না। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। প্রবাহমান তরল যখন নিজস্ব গতিপথ পরিবর্তন করে আদিস্থান ও আকারের পরিবর্তন করে, তখন গতিপথ পরিবর্তনের কারণে কিছু শক্তি হারিয়ে ফেলে। সাধারণত পাইপের গ্রন্থচ্ছেদের পরিবর্তনের কারণে এবং বাধা ও ঘর্ষণের ফলে তরল এ শক্তি হারায়। অবশ্য তরলের চাপ ও গতির পরিবর্তনের ফলেও কিছু শক্তি কমে। তরল পদার্থের আপেক্ষিক গুরুত্ব যত বেশি এটির হেড লসের পরিমাণও তত বেশি।

নিম্নলিখিত কারণে শক্তির অপচয় হয়ে থাকে

১/ পাইপের ব্যাস হঠাৎ বেড়ে গেলে
২/ পাইপের ব্যাস হঠাৎ কমে গেলে।
৩/ পাইপের ভেতর কোনো কিছু দিয়ে তরল বাধাগ্রস্ত হলে।
৪/ তরলের পাইপের প্রবেশের কারণে
৫/ তরলের পাইপ ততে নির্গমনের কারণে
৬/ পাইপের বাঁকজনিত কারণে
৭/ পাইপে ঘর্ষণজনিত কারণে

পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য

পানির অপচয় এবং পানির খরচ কমানোর জন্য নিম্নলিখিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো নেয়া যায় :

১/  ব্যবহারকারীদের নিজ নিজ সার্ভিস পাইপে পানি মিটার বসিয়ে তাদের নিজ নিজ পানি খরচ অনুযায়ী
পানি কর প্রদানের ব্যবস্থা করা।
২/ সবিরাম সরবরাহ পদ্ধতি অনুসরণ করা।
৩/ এক একটি বিতরণ এলাকাকে কতগুলো উপ-অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি উপ-অঞ্চলে পানি মিটার বসানো এবং মাঝে মাঝে ঐসব উপ অঞ্চলের মোট পানি খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করা।
৪/ পানির সার্ভিস পাইপ ও বাড়ি-ঘরে পানি সরবরাহের আনুষঙ্গিক ফিটিংস মাঝে মাঝে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা এবং অকেজো ও পানি চুয়ানো কলগুলো বদলানোর ব্যবস্থা করা।
৫/ কেবল মাত্র দক্ষ প্লাম্বার দিয়ে বাড়ি ঘরের পাইপ বসানোর কাজ করা।
৬/ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পানির অব্যবহার ও তার ক্ষতি সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা।

৭/এ তালিকায় প্রতি ফিটিংস ও ভালভের ঘর্ষণজনিত অপচয় জানা যায় ।
৮/  একক মিটার (m) দিয়ে প্রকাশ হয়, কিন্তু চাপ দিয়েও প্রকাশ করা যায়।
যেমন : ০.৬m হলে ০.০৬ kg/cm হয়। পাইপে ফিটিংস ও ভালভ সংযুক্ত করলে সংযুক্ত স্থানে কিছু কিছু ঘর্ষণজনিত অপচয় ঘটে। পাইপের ঘর্ষণজনিত অপচয় হিসার করার জন্য পাইপ লাইনে সংযুক্ত ফিটিংস ও ভালভের ঘর্ষণজনিত অপচয় রোধ করতে হবে। এ তালিকাটি সে সূত্র থেকে দেয়া হয়েছে।


পানির ট্যাংক - Water Tanks - পানির লাইনের কাজ - সরবরাহ লাইনে তারতম্য


অন্য পোষ্ট : soil pipe | water supply pipe | sewer vent pipe | Waste Water pipe

পানির ট্যাংক (Water Tanks ) :

পানি বণ্টন ব্যবস্থায় জরুরি বা আপদকালীন সময়ে পানি পেতে একটি নির্দিষ্ট জলাধারে (Tank-এ) পানি
সঞ্চয় করে রাখা প্রয়োজন। তা ছাড়া সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ হতে চাহিদার পরিমাণ বেশি হলে পানি সঞ্চয়ের প্রয়োজন হয়। ট্যাংক কংক্রিট, ইটের গাঁথুনি, ইস্পাত, ফেরো-সিমেন্ট বা মাটির তৈরি হতে পারি। একটি ট্যাংকে দীর্ঘদিন পানি অবস্থান করলে পানি তলানি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু, শেওলা জাতীয় উদ্ভিদ ইত্যাদি সৃষ্টির কারণে পানির স্বাদ, গন্ধ ও মান পরিবর্তন হতে পারে। তাই ট্যাংক বা জলাধার নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী জলাধারকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যথা
(ক) আবদ্ধ জলাধার ( Impounding Reservoir)
(খ) বণ্টন জলাধার (Distribution Reservoir)
চারদিকে মাটির বাঁধ দিয়ে তৈরি করে পানি একটি নির্দিষ্ট স্থানে সঞ্চয় করে রাখলে তাকে আবদ্ধ জলাধার বলে। আবার বিশুদ্ধ পানি প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ট্যাংক বা জলাধারে জমা করে পরে প্রয়োজন মতো গ্রাহকদের নিকট পৌঁছে দেয়া হয়। এ ধরনের ট্যাংককে বণ্টন জলাধার বলে।
বণ্টন জলাধারকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
(১) ভূ-গর্ভস্থ জলাধার (Underground reservoir or tank)
(২) ওভারহেড জলাধার (Overhead reservoir or tank)
বণ্টন জলাধার মাটির নিচে মাটির উপরে অথবা কাঠামোর ওপর তৈরি করা হয়। এদের আকৃতি ও আয়তন প্রয়োজন অনুসারে হয়। সাধারণত বণ্টন জলাধারের ধারণ ক্ষমতা ২.৫ থেকে ৫ লক্ষ লিটার। এর গভীরতা ৩.৫ থেকে ৬ মিটার। ট্যাংকে আগমন, নির্গমন ও উপচানো পাইপের সংযোগ দেয়া থাকে।
পানি সরবরাহ সংস্থার মেইন থেকে সার্ভিস পাইপ দিয়ে বহুতল বিল্ডিংয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। সার্ভিস পাইপ দিয়ে সিটি সাপ্লাইয়ের পানিকে নিচে স্টোরেজ ট্যাংকে সঞ্চয় করে রাখা হয় এবং প্রয়োজনমতো পাম্পের সাহায্যে বহুতল বিল্ডিংয়ের ছাদের উপরে স্থাপিত ট্যাংকে পানি ওঠানো হয়। সেখান থেকে ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ দিয়ে বিল্ডিং-এর প্রতি ফ্ল্যাটের রন্ধনশালায়, স্নানাগার, বেসিন, সিংক, ওয়াটার ক্লোসেট, বাথটাব এবং অন্যান্য ফিটিংসে পানি সরবরাহ করা হয়। অনেক বহুতল বাড়িতে নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকে, যেমন ডিপ টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ), যা থেকে টারবাইন পাম্প দিয়ে বহুতল বাড়ির ছাদে স্থাপিত ট্যাংকে পানি ওঠানো হয় এবং সেখান থেকে বিল্ডিংয়ের সর্বত্র পানি সরবরাহ করা হয়। যেহেতু এক ঘন লিটার=১০০০ লিটার, তাই ট্যাংক-এর আয়তন ঘনমিটার বের করে ১০০০ দিয়ে গুণ করলে ট্যাংকের ধারণক্ষমতা লিটারে বের করা যাবে। অথবা এক ঘনফুট=৬.২৫ গ্যালন বিধায় ট্যাংক-এর আয়তন ঘনফুটে বের করে ৬.২৫ দিয়ে গুণ করলে ট্যাংক এর ধারণ ক্ষমতা গ্যালনে বের করা যাবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url