water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

 water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter
water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

পানি সরবরাহ প্রযুক্তি (Water Supply Technology)

সভ্যতার আদিম যুগ থেকে জীবন ধারণের অন্যতম সর্বাধিক প্রয়োজনীয় এবং জনস্বাস্থ্যের প্রাথমিক অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই পানির অপর নাম জীবন। প্রাকৃতিক ভাঙারে বিশুদ্ধ ও দূষিত উভয় রকম অফুরন্ত পানি সঞ্চিত আছে। জীবন ধারণ ও জীবন নির্বাহের জন্য আমাদের ঠিক করে নিতে হবে কোন ধরনের পানি আমরা গ্রহণ করব। বস্তুত পানি সরবরাহ প্রযুক্তিবিদ্যা হলো-পানির উৎস মুখ খুঁজে তার পরিমাণ ও গুণাগুণ এবং প্রয়োজনীয় শোধন সাপেক্ষে আমাদের প্রয়োজন অনুসারে জনবসতি এলাকায় পানি সরবরাহ করার বিজ্ঞান বা কলাকৌশল।
এ প্রযুক্তি বিদ্যার মুখ্য উদ্দেশ্যগুলো হলো -
ক) বাড়ি বাড়ি বিশুদ্ধ পানীয় পানি সরবরাহ করা।
খ) পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সরবরাহ করা।
গ) নিয়মিত পানি সরবরাহ করা।
ঘ) অল্প ব্যয়ে ও অনায়াসে জনসাধারণকে পানি সরবরাহ করা।

অন্য পোষ্ট : Pillar cock | Bib cock | Stop cock, Plastic facet, Bronze facet

পানি সরবরাহ পদ্ধতি

সাধারণত দুই পদ্ধিতিতে পানি সরবরাহ করা হয়। যথা 

ক) অবিরাম সরবরাহ পদ্ধিতি (Continuous Supply System)
খ) সবিরাম সরবরাহ পদ্ধতি (Intermittent Supply System)
অবিরাম পদ্ধতিতে সর্বক্ষণ অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হয়। আর সবিরাম পদ্ধতিতে কিছু সময় বিরতির পর পর কয়েকটি নির্দিষ্ট সময়ে পানি সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ প্রচুর ও পর্যাপ্ত হলে অবিরাম সরবরাহ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। আর পানির পরিমাণ সীমিত ও অপ্রতুল হলে সবিরাম সরবরাহ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।


water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

পানি বণ্টন ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় শর্ত

একটি ভালো বণ্টন ব্যবস্থা পরিকল্পনা করার সময় নিম্নলিখিত প্রয়োজনীয় শর্তগুলো বিবেচনা করা হয়। যেমন
ক) বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকালে পথিমধ্যে পরিবেশগত কারণে পানি যেন দূষিত হয়ে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
খ) একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের সকল ঘরবাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান, অগ্নিনির্বাপণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পানির মতো প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ এবং চাপ থাকা প্রয়োজন।
চাহিদা মেটানোর
গ) বণ্টন ব্যবস্থায় কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বা অপর কোন কারণে এক দিকের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে অন্য ফিডার হতে পানি প্রবাহ অব্যাহত রাখার মতো ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ঘ) পানি বণ্টন ব্যবস্থা যাতে কারিগরি দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত, সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যকর হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ঙ) বণ্টন ব্যবস্থার পরিকল্পনা, ডিজাইন, লে-আউট, মেরামত ও সংরক্ষণ পদ্ধতি কারিগরি দিক থেকে অতি সহজ, সরল ও সাধারণ হওয়া উচিত।
চ) লে-আউট বা পাইপ সজ্জার কাজ এমনভাবে করতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট শহরের অন্যান্য প্রযুক্তি যেমন টেলিফোন লাইন, বিদ্যুৎ লাইন, সিউয়ারেন্স লাইন, গ্যাস লাইন ইত্যাদির কাজে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

পানি বণ্টন ব্যবস্থা পরিকল্পনার পর্যায়ক্রমিক ধাপ :

 শহরাঞ্চলে পানি সরবরাহের সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থা পরিকল্পনার পূর্বে নিচে লিখিত পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়। যেমন

ক) পানি সরবরাহ কেন্দ্রের সাপেক্ষে পুরো এলাকাকে উঁচু অঞ্চল, নিচু অঞ্চল এবং সমতল অঞ্চলে ভাগ করতে হবে। এ ভাগের ওপর নির্ভর করবে কোনো অঞ্চলে কোন ধরনের বন্টন ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
খ) প্রতিটি অঞ্চলকে আবার জনসংখ্যার ভিত্তিতে বা ক্ষেত্রফলের ভিত্তিতে কতগুলো উপ-অঞ্চলে ভাগ করতে হবে। প্রতি ২০-২৫ হাজার জনসংখ্যা সমন্বিত উপ-অঞ্চলের জন্য আলাদা জলাধার থাকবে।
গ) প্রতিটি উপ-অঞ্চলে অবস্থিত ঘরবাড়ি, রাস্তাঘটি ইত্যাদির অবস্থান অনুযায়ী পাইপ লাইন সংস্থাপন,
ডিজাইন, নক্সা অঙ্কন এবং বথাস্থানে ভালুত হাইড্রাষ্ট, পাম্প, মিটার ইত্যাদি বসানোর প্রয়োজনীয়তা
নির্ধারণ করতে হবে।


অন্য পোষ্ট : Plumbing Fixtures | প্লাম্বিং ফিকচার, Sink, Bathtub, Shower bath, Flushing

water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

পানি বণ্টন পদ্ধতির শ্রেণিবিভাগ (Classification of Distribution System)

সাধারণত পানি বণ্টন পদ্ধতি তিন রকম, যেমন
১। অভিকর্ষ বণ্টন পদ্ধতি (Gravity System) বণ্টন এলাকা পানির উৎস থেকে নিচে অবস্থিত হলে সেখানে পানি অতিবর্ষ পদ্ধতিতে পাইপের মাধ্যমে জন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। উৎসটিও শোধনাগার অপেক্ষ উঁচুতে অবস্থিত হলে আদর্শ অভিকর্ষ পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। পানি প্রথমে শোষনাগরে এবং সেখান থেকে বণ্টন এলাকার সহজে ও কম খরচে এ পদ্ধতিতে সরবরাহ করা সম্ভব, তাই এ পদ্ধতিটি অবলম্বন করার জন্য প্রথমে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

২। যুক্ত বা দ্বৈত বণ্টন পদ্ধতি (Combination or Dual Distribution System) পানি শোধানাগার (Water Purification Plants) তথা পানি কর্ণালয় (Water-works) এবং বণ্টন এলাকা (Distribution Area) মোটামুটি একই তলে অবস্থিত হলে শোধনাগার থেকে পরিবৃত পানি পাম্পের সাহায্যে অপেক্ষকৃত উঁচু স্থানে নির্মিত ৰা উত্তোলিত বণ্টন জলাধারে ভর্তি করা হয় এবং পরে সেখান থেকে অভিকর্ষ মাধ্যমে বণ্টন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। প্রথম পদ্ধতি অপেক্ষা এ পদ্ধতিতে খরচ একটু বেশি হয়, কিন্তু আমাদের সমভূমি অঞ্চলে এটি বেশ প্রচলিত। কেননা, এ পদ্ধতির অন্যান্য সুবিধা অনেক। এ পদ্ধতিতে স্থায়ী ও বিশ্বস্তভাবে মোটামুটি একই বেগে যে কোনো চাহিদামতো (সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন তথা উঠতি পদ্ধতি) যেকোনো সময় (জরুরি সময়েও) পানি সরবরাহ করা সম্ভব।

৩। পাম্প বা প্রত্যক্ষ বণ্টন পদ্ধতি (Pumping System of Distribution) সমগ্র বা আংশিক বণ্টন এলাকা শোধনাগার তথা বণ্টন জলাধার থেকে উঁচুতে অবস্থিত হলে পুরো এলাকার বা অপেক্ষাকৃত উঁচু তলে অবস্থিত অংশটিতে পানি প্রেয়ণে পাম্পের সাহায্যে চাপ সৃষ্টি করে পানি সরাসরি মূল সরবরাহকারী পাইপে চালনা করা হয়। সরাসরি পাম্প করে বণ্টন চাপ (Distribution Pressure) সৃষ্টি করা হয় বলে এ পদ্ধতির আর এক নাম প্রত্যৎ বণ্টন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে পাম্প করা তথা পাম্পের যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও তত্ত্বাবধান খরচ অপেক্ষাকৃত বেশি। তাছাড়া পানির ব্যবহারের হার (Consumption Rate) এর ওপর পাইপে বণ্টন চাপের তারতম্য হতে পারে। অবশ্য সবিরাম জল সরবরাহের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি উপযোগী।

water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter


বণ্টনে পাইপ সজ্জার বিভিন্ন পদ্ধতি (Different methods in lay out of Distribution Pipes)

পানি বণ্টন বা বিতরণ পদ্ধতিতে (Distribution System) এ পানি সরবরাহকারী পাইপ সাধারণত ৪
(চার) ভাবে সাজানো যায় :
ক) বৃক্ষসজ্জা ব্যবস্থা (Dead end or Tree System)
খ) ঝাকরি সজ্জা ব্যবস্থা (Grid Iron System)
গ) বৃত্তাকার সজ্জা ব্যবস্থা (Ring or Circular System)
গ) কিরণ সজ্জা ব্যবস্থা (Radial system)

ক) বৃক্ষ সজ্জা ব্যবস্থা (Dead end or Tree System) 

এ পদ্ধতিতে কোন সরবরাহ প্রকল্পের মূল সফরাগার থেকে প্রধান সড়কের নিচে দিয়ে প্রধান সরবরাহ পাইপ লাইন বসানো হয়। এই প্রধান সরবরাহ পাইপ থেকে প্রায় ৯০০ মি. পর পর উভয়দিকে সমকোণে উপ প্রধান পাইপ, উপ-প্রধান পাইপ থেকে শাখা পাইপ এবং শাখা পাইপ থেকে বাড়িঘরের সার্ভিস পাইপ বসিয়ে বাড়ি ঘরে পানি পৌঁছে দেয়া হয়। Dead End বা বৃক্ষ সজ্জা পদ্ধতির সুবিধা
অ) এ পদ্ধতিতে পাইপ বসানো সহজতর, ফলে খরচ অপেক্ষাকৃত কম।
আ) এ পদ্ধতিতে পাইপ বসানো হলে পাইপ লাইনের যে কোন বিন্দুতে পানির প্রবাহ ও চাপ সহজেই নির্ণয় করা যায়।।
ই) এ পদ্ধতিতে পাইপ লাইনের উঁচু প্রান্তে ভালুত লাগিয়ে পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং প্রয়োজনে এই ভাত বন্ধ করে মেরামত কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়।
ঈ) এ পদ্ধতিতে পুরাতন শহর এলাকায় পানি সরবরাহ করা বেশি সুবিধাজনক। Dead End বা বৃক্ষ সজ্জা পদ্ধতির অসুবিধা
(অ) এ পদ্ধতিতে প্রতিটি পাইপের নিচু প্রাপ্ত শিক্ষর্মা। এ প্রান্তে পানি সব সময় স্থিরভাবে জমে থাকে, ফলে সে স্থানের পাইপে তলানি ময়লা জমে পানি সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটায়। 
(আ) এ পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ পাইপ লাইনের মেরামতের সময় ঐ পাইপ লাইনের ভযুক্ত বন্ধ করে রাখতে হয়, ফলে বিরাট এলাকার পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে।

water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

খ) বরিসা ব্যবস্থা (Grid Iron System)

এ পদ্ধতিতে পাইপের প্রাজগুলোকে শাখা পাইপ দিয়ে পরস্পর জুড়ে দেয়া হয়, ফলে কোন প্রান্তই নিষ্কর্মা থাকে না এবং পানিও সর্বত্র সচল থাকে। জায়তকার শহর এলাকার প্রধান রাস্তা দিয়ে প্রধান পাইপ এবং তার সাথে লম্বভাবে উপ-প্রধান পাইপ ও উপ-প্রধান পাইপের সাথে লম্বভাবে শাখা পাইপের সংযোগ সাধন করা হয়। এটি দেখতে ঝাঁঝরির মতো।

অন্য পোষ্ট : expansion joint | collar joint | Pipe joint | flanged joint in pipe, Mortise Joint

মিড আয়রন বা ঝাঝরিসা পদ্ধতির সুবিধা

অ) পানিপ্রবাহ অনবরত চলতে থাকায় পাইপ লাইনের কোথাও কোনো তলানি জমতে পারে না।
আ) সংরক্ষণ ও মেরামত কাজের জন্য কোনো অংশের পানিপ্রবাহ বন্ধ করলে বিকল্প পথ দিয়ে বাকি এলাকর পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখা যায়।
গ্রিড আয়রন বা ঝাঁঝারি সজ্জা পদ্ধতির অসুবিধা
অ) এ পদ্ধতিতে প্রচুর ভাবৃত এর মেরামত ও সংরক্ষণ ঘন ঘন করার ফলে খরচ বেড়ে যায়।
আ) প্রচুর ভাল্ভ-এর প্রয়োজন হয়।

ক) বৃত্তাকার সজ্জা ব্যবস্থা (Ring or Circular System)

 এ পদ্ধতিতে সমর্থ বণ্টন এলাকাকে কতকগুলো আয়তকার বা বৃত্তাকার ব্লকে ভাগ করে নিতে হয়। তারপর ঐ অঞ্চলের পরিসীমা বরাবর প্রধান পাইপ লাইন বৃত্তাকারে বসিয়ে তা থেকে উপ-প্রধান ও শাখা পাইপ লাইনের সহযোগ সাধন করা হয়। কেবলমাত্র সুপরিকল্পিত শহরেই এ পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে মেরামত কাজের সময় সরবরাহ প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। অন্তত দুই দিক দিয়ে কোনো এক স্থানে পানি পাঠানো যায়।

খ) ফিরণ সজ্জা ব্যবস্থা (Radial System) :

এ পদ্ধতিতে পুরো শহরটিকে কয়েকটি বণ্টন এলাকায় বিভক্ত করে প্রতিটি বন্টন এলাকার কেন্দ্রস্থলে একটি করে বণ্টন সঞ্চঘাগার তৈরি করা হয়। ভারপর বণ্টন সঞ্চয়গার হতে ঐ এলাকার পরিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত কতকগুলো প্রধান পাইপ ব্যাসার্ধ অনুসারী অর্থাৎ রেডিয়ালি বসানো হয়। এ পদ্ধতিতে পানি কেন্দ্র হতে পরিসীমার দিকে সরবরাহ করা হয়। এভাবে পানি তাড়াতাড়ি সরবরাহ করা সম্ভব।

পানি মিটার (Water Meter)

পাইপের ভিতর দিয়ে সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ পরিমাপ করার যন্ত্রকে পানি—মিটার বা প্রবাহমান যন্ত্র বলে।

পানি মিটারের শ্রেণিবিভাগ

কার্যপদ্ধতি অনুসারে পানি-মিটার মূলত তিন প্রকার ক) গতি মিটার (Velocity Meter) বা অনুমানসিদ্ধ (Inferential Meter)।

খ) ধনাত্মক মিটার (Positive Meter) বা স্থানচ্যুতি মিটার (Displacement Type Meter)

গ) বৈষম্য নির্ভর মিটার (Differential Meter)

ক) পতি মিটার (Velocity Meter)

এ মিটারে পাইপের কোন অংশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তরণের গতি (Velocity) মাপা যায় এবং এর ঐ অংশের গ্রন্থচ্ছেদী ক্ষেত্রফল জানা গেলে প্রবাহের পরিমাণ তরলের গতিবেগ প্রস্থচ্ছেদী ক্ষেত্রফল এ নিয়মে সাধারণত দুই ধরনের গতিবেগ মিটার চালু আছে:

প্রবাহের পরিমাণ সহজে নির্ণয় করা যায়।
অ) ঘূর্ণি মিটার (Rotary Meter)
আ) টারবাইন মিটার (Turbine Meter)
অ) ঘূর্ণি মিটার (Rotary Meter)
এ যন্ত্রের মাঝে কতকগুলো কিরণ সজ্জিত বক্রাকার পাত একটি দণ্ডের সাথে আবদ্ধ থাকে। আগত পানি এ পাতগুলোর ওপর পড়ার ফলে ঐগুলো ঘুরতে থাকে ও সাথে সাথে সংলগ্ন সটিও ঘোরে। দন্ডটির এ ঘূর্ণন পানির গতিবেগের সমানুপাতিক। তাই দন্ডটির সাথে গিয়ার ও পিনিয়ন ব্যবস্থাযুক্ত ডায়ালের কাঁটা ঐ অনুপাতে ঘোরে। ডায়ালের ছককাটা ঘরগুলোর মান এমনভাবে ঠিক করা থাকে, যাতে সরাসরি প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব।

আ) টারবাইন মিটার (Turbine Meter) এ যন্ত্রটির পঠন, কার্যপদ্ধতি তথা প্রবাহমান নিরূপণ পদ্ধতি ঘূর্ণি মিটারের অনুরূপ। শুধু ঘূর্ণি মিটারের কিরণ
সজ্জিত বক্রাকার পাতের পরিবর্তে এখানে টারবাইন চক্র বা চালন চক্র থাকে এবং এটিও আগত পানির তোড়ে পানির সমানুপাতিক গতিবেগে ঘোরে।

(খ) ধনাত্মক মিটার বা স্থানচ্যুতি মিটার (Positive meter or Displacement type meter) ধনাত্মক মিটারে প্রতিক্ষেপ ওঠা-নামায় বা চাকতির একবার পুরোপুরি আবর্তনে স্থানচ্যুত পানির আয়তন সরাসরি মাপা যায়। তাই এর অপর নাম স্থানচ্যূতি মিটার। পিস্টল অথবা চাকতির এ ওঠা-নামা বা আৰবৰ্তন
অনুযায়ী এ মিটার তিন প্রকার, যথা :
অ) পশ্চাদগ্ন প্রকার (Reciprocating Type)
আ) ঘূর্ণি প্রকার (Rotary Type)
ই) দোদুল্যমান প্রকার (Oscillating Type)

ধনাত্মক বা স্থানচ্যুতি মিটারের ভেতর আগমন পথ ও নির্দমন পথযুক্ত একটি চোঙাকৃতি কক্ষ থাকে। এর আয়তন পূর্বেই জানা থাকে। ঐ চোঙাকৃতি কক্ষের ভেতর একটি পিস্টন দণ্ড বা একটি চাকতি থাকে। ঐগুলো সিয়ার ও গিনিয়ন ব্যবস্থায় কক্ষের বাইরে অবস্থিত ছক কাটা। পিস্টনের একবার ওঠা-নামা পূর্ণ হলে বা চাকতিটি তার কক্ষপথে একবার পূর্ণ আবর্তন করলে চোস্তাকৃতি কক্ষটিও একবার পুরোপুরি ভর্তি ও শূন্য হয়। পিস্টনের এ ওঠা-নামা বা চাকভির এ পথ-পরিক্রমা এগুলোর সাথে যুক্ত মিটারের কাঁটা দিয়ে ডায়াদের ওপর নির্দেশিত হয়। দাগ কাটা বা হক কাটা ভারালের স্কেলটি থেকে আমরা সরাসরি প্রবাহের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারি। এখানে একটি Neutating Disc Meter দেখানো হয়েছে। ছোট আকারের পাইপের কম প্রবাহ পরিমাপ করতে এ ধরনের মিটার খুবই সক্ষ। তাই বাড়িঘয়ের বা হোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের সরবাহকৃত পানি মাপার উদ্দেশ্যে এগুলো বহুল ব্যবহৃত হয়।


অন্য পোষ্ট : প্লাম্বিং ফিটিংস | Plumbing Fittings, Elbow, Tee, Union

water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter

গ) বৈষম্যনির্ভর মিটার (Differential Meter) 

পানি সরবরাহ পাইপের কোনো দুটি বিন্দুর চাপের বৈষম্য থেকে ঐ পাইপের পানিপ্রবাহের পরিমাণ বের করাই হচ্ছে এ মিটারের বৈশিষ্ট্য। সাধারণত শিল্প প্রতিষ্ঠানে বহুল ব্যবহৃত বৈষম্য নির্ভর মিটার দু' ধরনের, যথা : 

অ) ভেঞ্চুরি মিটার (Venturi Meter) 

আ) অরিফিস মিটার (Orifice Meter) 

উল্লেখিত দুটি মিটারের মাঝে ভেঞ্চুরি মিটারই সরলতম গড়নের এবং সহজতম কর্মপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। এর সাহায্যে সহজে বড় বড় (১৫ মি.মি. ব্যাসের ছোট নয়) পাইপের প্রবাহের পরিমাণ নির্ণয় করা যায় এবং প্রাপ্ত ফলও (প্রায় ৯৬%) বেশ নির্ভরযোগ্য। দুটি ক্রমশ সরু পাইপের মাঝখানে একটি ছোট্ট পাইপ দিয়ে যুক্ত থাকে। ছোট পাইপটিকে বলা হয় গলা। ক্রমশ সরু দুটি পাইপের দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৪৩ । বলা বাহুল্য দুটি পাইপেরই সর্বোচ্চ ব্যাস মূল পাইপের ব্যানের সমান এবং গলার দিকে এদের ব্যাস সমান। যেদিক থেকে প্রবাহ আসবে ঐদিকে থাকে ছোটটি। একটি পিজোমিটার নল- এর এক প্রান্ত মৃণ পাইপ ও ছোট ক্রমশ সরু পাইপের সংযোগস্থলে এবং অপর প্রান্তটি গলার সঙ্গে জুড়ে দিয়ে পিজোমিটার নলটিকে খাড়া লম্বাভাবে একটি কাঠের স্কেলের সঙ্গে আটকে দেয়া হয়। মূল পাইপ থেকে ছোট ক্রমশ সরু পাইপটিতে পানি প্রবেশ করার সাথে সাথে পানির চাপ কমতে থাকে এবং পরিবর্তে জলের গতিবেগ বাড়তে থাকে। তাই এ পাইপের প্রবেশ প্রাপ্ত ও নির্গমন প্রান্তর মাঝে চাপের পার্থক্য হয় এবং ঐ পার্থক্য পিজোমটার নলে ধরা পড়ে। ধরা যাক, চাপের ও পার্থক্য। তাহলে মূল পাইপে পানির প্রবাহের পরিমাণ নিচে দেয়া সূত্রের সাহায্যে নির্ণিত হয়।
একটি আদর্শ পানি মিটারের বৈশিষ্ট্য নিচে বর্ণিত বৈশিষ্টগুলোর ওপর নির্ভর করেই পানি- মিটার আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়
১। প্রবাহের পরিমাণ কম বা বেশি হোক, পানি প্রবাহ সবিরাম হোক, কিংবা অবরাম হোক, মিটার যেন
সঠিকভাবে প্রবাহ পরিমাণ করতে পারে।
২। পানির মাঝে সম্ভাব্য সব অম্ল ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ কিংবা ক্ষুদ্রাকার কাদা-বালি ইত্যাদি থাকতে পারে। এগুলো দিয়ে মিটারের যন্ত্রায়শ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় অথবা মিটারের কাজ যেন ব্যাহত না হয়।
৩। মিটারের অবস্থিতির জন্য জলপ্রবাহ যেন খুব বেশি বাধাপ্রাপ্ত না হয়, অর্থাৎ মিটার অবস্থিতির জন্য হেড
অবচয় যেন যথাসম্ভব কম হয়।
৪। রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত তথা মিটার চালানোর খরচ যেন যথসম্ভব কম হয়।

মিটার ব্যবহারের সুফল ও কুফল ব্যবহারের সুফল

১। ব্যবহারকারীকে তার পানি খরচের অনুপাতে পানির দাম দিতে হয়। এতে অযথা অপব্যয়ের ঝোঁক কমে
যায়। ফলে সরবরাহকৃত পানির পরিমাণ কম হলে চলে এবং শোধনাগারগুলোকে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারে নির্মাণ করা চলে। সুতরাং পরিশোধন খরচও কম পড়ে।
২। পানি অপচয় কম হয়। ফলে, একই পরিমাণ পানি দিয়ে বেশি সময় পানি সরবরাহ করা, এমনকি
অবিরামভাবে পানি সরবরাহ সম্ভব হতে পারে।
৩। মিটার ব্যবহার করলে অজানা জায়গায় অজানা কারণে উদ্ভূত অপচয়ের স্থানগুলো সহজে নির্ণয় করা সম্ভব।
৪। গরিব সম্প্রদায় তথা যারা সত্যিকার কম পানি খরচে অভ্যস্ত, তারা এ ব্যবস্থায় লাভবান হবেন। কেননা মিটার না থাকলে তাঁদেরও গড়ে সমান পানি কর দিতে হয়।
৫। পানি অপচয় কম হলে, পয়ঃমল নল প্রণালিতেও চাপ কম পড়ে। ফলে, সেখানেও অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পাইপের ব্যবহার কিংবা জল-শোধনাগার অপেক্ষাকৃত ছোট মাপের করা ইত্যাদিতে খরচ কমানো সম্ভব।

ব্যবহারের কুফল

১। মিটার যন্ত্রটি বসাতে ও চালু রাখতে বেশ খরচ পড়ে এবং এ খরচ পানি ব্যবহারকারীদেরই বহন করতে হয়।
২। পাইপের মাঝখানে মিটারের অবস্থিতি পানিপ্রবাহ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে ফলে কিছু হেড অপচয় হয় এবং পানি ব্যবহারকারীরা অপেক্ষাকৃত কম চাপে পানি পান।
৩। পাইপে যখন পানিপ্রবাহ থাকে না কিংবা যখন পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কোনো কারণে আকস্মিকভাবে কোনো এলাকায় বিঘ্নিত হয় বা ভেঙে পড়ে, তখনও ব্যবহারকারীদের অলস মিটার চার্জ দিতে হয়। এটি সঙ্গত কারণেই অবাঞ্ছনীয়।
 সরবরাহ লাইনে পানি মিটারের অবস্থান, স্থাপন ও সংরক্ষণ সাধারণত পৌর মূল পাইপ থেকে ফেরুল স্থাপনের মাধ্যমে বাড়িঘরে পানি সরবাহের ব্যবস্থা করা হয়। এ নকলে পানিবাহী পাইপ বা সার্ভিস পাইপ বলে। ফেরুলের পরে পানির লাইনে হংস গ্রীবা স্থাপন করা হয়। হংস গ্রীবার পর বাড়িঘর পর্যন্ত যে পানি পাইপ স্থাপন করা হয়, একেই সার্ভিস পাইপ বলে। এ সার্ভিস পাইপেই পানির মিটার সংস্থাপন করা হয়। সাধারণত যেখান থেকে সার্ভিস পাইপ বাড়ির জমিতে প্রবেশ করে সেখানে
একটি স্টপ কক স্থাপন করা হয়। তারপর সার্ভিস পাইপ যখন বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করে, তার কিছুটা পরেই

সুবিধাজনক স্থানে পানির মিটার সংস্থাপন করা হয়। সাধারণত বাড়িঘরে ঘূর্ণি মিটার সংস্থাপন করা হয়। বাড়ির সীমানায় সার্ভিস পাইপে এটি স্থাপন করা হয়। সার্ভিস পাইপের দুই অংশে ইনলেট টেইল পিস ও আউটলেট টেইল পিসেল সাহায্যে স্থাপন করা হয়। এটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে গদ্বাস ডিস্ক অংশটি ভূমির সমান্তরাল ওপরে অবস্থান করে এবং সার্ভিস পাইপের ওপরের সেন্টার লাইন বরাবর স্থাপিত হয়।

পানির মিটার যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। সাধারণত ইটের গাঁথুনি বা কংক্রিট ঢালাই করে ছোট ঘন আকৃতির আধার তৈরি করে মিটার স্থাপন করা হয়। এবং আধারের ওপরে ঢাকনি দেয়া হয়। যার ফলে মিটারে কোনো আঘাত লাগার সম্ভবনা থাকে না। অনেক সময় প্লাস্টিকের বক্স ভূমিতে স্থাপন করে তার মাঝে মিটার স্থাপন করে সংরক্ষণ করা হয়। শীতপ্রধান দেশে বরফে জমে যাওয়া থেকে রেহাই পেতে সাধারণত দালানের ভেতরেই পানি-মিটার বসানো হয়।

water meter - venturi meter - orifice meter - rotary meter - turbine meter


অন্য পোষ্ট : G i pipe | pvc pipe | ppr pipe | upvc pipe | Compressed air pipelines

তবে নিম্নলিখিত কারণে পানি-মিটার বাইরে বসানো পানি সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের পছন্দনীয় :

(ক) মিটারের সুবিধাজনক অবস্থান।
(খ) অবৈধ সংযোগের সম্ভবনা থেকে আশঙ্কামুক্ত।
(গ) ভেতরের সার্ভিস পাইপে পানি চুয়ানোসহ হোল্ডিং-এ সরবরাহকৃত পুরো পানির পরিমাণ হওয়া।
মিটারে রেকর্ড
(ঘ) যে কোনো সময় দালানে প্রবেশ না করতে মিটার রিডিং গ্রহণ ও প্রয়োজনে মিটার সার্ভিসিং ও মেরামত। 

(ঙ) প্রয়োজনে বাড়িতে প্রবেশ না করে মিটার বন্ধ বা সিল করে দেয়া।

আমাদের দেশে ব্যবহাকারীরা হোল্ডিংয়ের ভেতরেই পানি-মিটার সংস্থাপনে অগ্রহী। কারণ পানির মিটার বাড়ির বাইরে বসানো একদিকে যেমন ব্যয়বহুল, অপরদিকে মিটার চুরি হয়ে যাওয়া, অহরহ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, জলবদ্ধতা ইত্যাদি কারণে মিটার নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। বাড়ি বা দালানের ভেতরে পানি মিটার বসালে এমন জায়গায় বসাতে হয়, যেন সহজেই সেখানে যাওয়া যায়, রিডিং নেয়া যায় এবং সার্ভিসিং ও মেরামত করা যায়। একটি ডিস্ক মিটার এমনভাবে স্থাপন করতে হয়, যাতে ডিস্কটি পুরোপুরি আনুভূমিক অবস্থানে থাকে। এটি সার্ভিস লাইনের সাধারণ অ্যালাইনমেন্ট থেকে এক মিটার উচ্চতার মধ্যে বসাতে হয়, যাতে বাতাস বা গ্যাস জমা হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে। পানি মিটার সরবরাহ পাইপের অ্যালাইনমেন্টের নিচুতলে বসানো উচিত নয়। এতে বালুকণা বা যাবতীয় তলানি জমা হয়ে মিটার ও সরবরাহ লাইনের ক্ষতি সাধন করে। মিটার ও সংযুক্ত পাইপ দৃঢ়ভাবে আটক স্থাপন করতে হয়, যাতে এটি নিরপদে থাকে ও শব্দ না করে। মিটারকে যথাস্থানে বসাতে ও চাপ বা টান থেকে নিরাপদ রাখতে মিটারের সাথে জোয়াল (Yoke) ব্যবহৃত হয়। পানির সার্ভিস লাইন অস্বাভাবিক উচ্চতায় বাড়িতে বা দালানে প্রবেশ করলে একে উল্লম্বভাবে বাঁক (Vertical Turn) দিয়ে মেঝে থেকে কোমর সমান উঁচুতে এনে মিটার সংযোগ করতে হবে। অনেক সময় মেঝেতে জায়গা বাঁচাতে মিটার মেঝের নেচে ছোট চৌবাচ্চা (Vault) করে বসানো হয়। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে, যেন চৌবাচ্চাটি কখনও প্লাবিত না হয় এবং পানি নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্ত থাকে। প্রায় সব ধরনের মিটারই এমনভাবে স্থাপন করা হয় যেন তা চালু অবস্থায় সর্বদা পানিপূর্ণ থাকে। এটি নিশ্চিত হওয়া যায়, যদি পাইপে বা পাত্রে পানি ছাড়লে তা একই ধারায় প্রবাহিত হয়ে পানিপূর্ণ হয়। মিটারের স্থায়িত্ব বাড়তে পানি ধীরগতিতে মিটারে প্রবেশ করানো হয়। মিটার থেকে পানি খোলা ট্যাংকে পড়লে মিটার থেকে উঁচুতে থাকবে যাতে বাতাসের সংস্পর্শ নিয়ে পানি ট্যাংকে পড়ে। আবার ট্যাংকে (Float Valve) বসালে এটি মিটারের ওপর থাকবে, যাতে মিটারে পানি হাতুড়ি (Water Hammer) বা অন্য কোনো কারণে সৃষ্ট ধাক্কা না লাগে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url