পরিমাপ ও পরীক্ষণ প্রক্রিয়া Measurement and Inspection Process
পরিমাপ ও পরীক্ষণ প্রক্রিয়া Measurement and Inspection Process
পরিমাপ ও পরীক্ষণ প্রক্রিয়া (Measurement and Inspection Process)
পরিমাপকরণ ও পরীক্ষণের মধ্যে পার্থক্য :
পরিমাপকরণবস্তুর বাস্তব মাপ গ্রহণ করার কৌশলকে পরিমাপকরণ বলে। যেমন স্টিল রুলের সাহায্যে একটি টেবিলের মাপ গ্রহণ করা অথবা একটা মাইক্রোমিটারের সাহায্যে কোনো যন্ত্রাংশের সঠিক ব্যাসের মাপ গ্রহণ করা।
পরীক্ষণ
বস্তুর বাস্তব মাপকে পূর্বনির্ধারিত মাপের সাথে তুলনা করাকে পরীক্ষণ বলে । যেমন ওয়্যার গেজের সাহায্যে কোনো নির্দিষ্ট ব্যাসের তারের ব্যাস সঠিক আছে কি না তা যাচাই করা । পরীক্ষণ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো তৈরিকৃত যন্ত্রাংশটি পূর্বনির্ধারিত পরিমাপ সীমার মধ্যে আছে কিনা এবং এটি ব্যবহারকারীর চাহিদা পূরণে সক্ষম কিনা? পরিমাপ নিয়ন্ত্রণক্ষম যন্ত্রাদি দ্বারা অপারেশন শেষে এরূপ পরীক্ষা করা হয়। সাধারণত যে সকল যন্ত্রের সাহায্যে সাধারণ মাপ গ্রহণ করা হয় তাকে মেজারিং টুলস বলে। যেমন স্টিল রুল, আউট সাইড ক্যালিপার, গেজ ইত্যাদি। আর যেসব যন্ত্রপাতি বা ডিভাইস মেজারিং টুলস-এর চেয়ে অধিক সূক্ষ্ম পরিমাপের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তাদেরকে মেজারিং ইনট্রুমেন্ট বলে। যেমন মাইক্রোমিটার, ভার্নিয়ার ক্যালিপার ইত্যাদি।পরিমাপক যন্ত্র (Measuring Tool)
যেসব যন্ত্র বা ডিভাইস কোনো বস্তু বা যন্ত্রাংশের মাপ গ্রহণে ব্যবহার হয়, তাদের পরিমাপক যন্ত্র বা মেজারিং টুলস বা ইন্সট্রুমেন্ট বলে। যেমন স্টিল রুল, ভার্নিয়ার ক্যালিপার, বিভেল প্রটেক্টর, মাইক্রোমিটার, স্লাইড ক্যালিপার ইত্যাদি।পরিমাপক যন্ত্র প্রাথমিকভাবে দুই প্রকারের হয়ে থাকে। ১. প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্র (Direct Measuring Tool)
2. পরোক্ষ পরিমাপক যত্ন ( Indirect Measuring Tool)
প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্র (Direct Measuring Tool)
পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তু, যন্ত্রাংশের পরিমাপ সরাসরি গ্রহণ করা হয় তাকে প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্র বলে যেমন- স্টিল রুল, ভার্নিয়ার ক্যালিপার, মাইক্রোমিটার ইত্যাদি ।
পরিমাপ ও পরীক্ষণ প্রক্রিয়া Measurement and Inspection Process
পরোক্ষ পরিমাপক যন্ত্র (Indirect Measuring Tool)
যে পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর মাপ সরাসরি গ্রহণ করা সম্ভব হয় না, উপরন্তু অন্য একটি প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে নিতে হয়, তাকে পরোক্ষ পরিমাপক যন্ত্র বলে। যেমন- ক্যালিপার, ডিভাইডার, জামেল ইত্যাদি। এখানে আউট সাইড ক্যালিপার দিয়ে কোনো বস্তুর বাইরের মাপ নিয়ে মাগটির পাঠ স্টিল রুলে স্থানান্তর করে বলা যাবে। এখানে স্টিল রুল প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্রের কাজ করে ।
পরিমাপ ও পরীক্ষণ প্রক্রিয়া Measurement and Inspection Process
পরিমাপ ও পরীক্ষাণের প্রয়োজনীর ক্ষেত্র
কোনো দ্রব্য উৎপাদনের পূর্বশর্তই হলো মানসম্পন্ন দ্রব্য উৎপাদন আর মানসম্পন্ন দ্রব্য উৎপন্ন করতে হলে চাহিদামতো সঠিক কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও দক্ষ কারিগর প্রয়োজন। এরপরও উৎপাদিত দ্রব্য ভোক্তার চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হতে পারে, যদি সে দ্রব্য সঠিক মাপ অনুযায়ী উৎপাদন করা না হয়। সঠিক পরিমাপবিহীন দ্রব্য যতই সুন্দর হোক না কেন সেটা ফ্ল্যাপ ছাড়া আর কিছুই নয় তাই কারিগরি উৎপাদন কাজে পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো যন্ত্রাংশ তৈরি করতে গেলে তা সঠিক পরিমাপের হওয়া আবশ্যক। সঠিক ও সূক্ষ্ম মাপ গ্রহণ করার জন্য দরকার দক্ষ ও অভিজ্ঞ কারিগর। কারণ উৎপাদিত দ্রব্য যত গুণসম্পন্ন ও সৌন্দর্যবর্ধক হোক না কেন যদি সঠিক মাপে উৎপাদন করা না যায় তবে সেটা বাস্তব অর্থে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়। এতে অর্থ, শ্রম ও সময়ের অপচয় হয় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিসহ সুনাম নষ্ট হয় যা ব্যবসার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এজন্য একজন কারিগরকে পরিমাপ নির্ণয় ও পরীক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং এ বিষয়ে যথাযথ ধারণ ও দক্ষতা থাকতে হবে।অসূক্ষ্ম ও সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্রের পার্থক্য :
সূক্ষ্মতার দিক দিয়ে পরিমাপক যন্ত্রকে চার ভাগে ভাগ করা যায়-১. অসূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র (Non-precision Measuring Tool)
২. আধা সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র (Semi-precision Measuring Tool)
৩. সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র (Precision Measuring Instrument)
৪. অতি সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র (High-precision Measuring Instrument)
অসূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র
এ যন্ত্রপাতিগুলো পরিমাপ গ্রহণের জন্য ব্যবহার হয়। এ যন্ত্রপাতি দ্বারা মেট্রিক পদ্ধতিতে সাধারণত ০.৫ মিমি রৈখিক মাপ এবং ১ ডিগ্রি পর্যন্ত কৌণিক মাপ গ্রহণ করা যায়। যখন পরিমাপ পরিদর্শনের সঠিকতা নিরূপণে সূক্ষ্মতার প্রয়োজন হয় না, তখন এ ধরনের যন্ত্রপাতি। ব্যবহৃত হয়। অসূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির পরিমাপ সাধারণত স্টিল রুল থেকে অথবা স্টিল রুলে স্থানান্তর করে পাঠ করতে হয়। ব্রিটিশ পদ্ধতিতে অধিক ব্যবহৃত অসূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে কমপক্ষে ১/৬৪ ইঞ্চি পর্যন্ত রৈখিক মাপ এবং ১ ডিগ্রি পর্যন্ত কৌণিক মাপ নেওয়া যায়। কোনো পরিমাপ যন্ত্রের দ্বারা সর্বনিম্ন যতটুকু মাপ পাওয়া যায় তাকে সর্বনিম্ন মাপ বা লিস্ট কাউন্ট বলে। স্কেল, ক্যালিপার, ডিভাইডার, কম্বিনেশন সেট প্রভৃতি অসুক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্রপাতির উদাহরণ। 120 100আধা-সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র
বস্তুত অসুদ্ধ ও আধা-সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্রে মাপের নিম্নসীমা একই অর্থাৎ রৈখিক মাপ ০.৫ মিমি অথবা ১/৬৪ ইঞ্চি এবং কৌণিক মাপ ও ডিগ্রি। আধা-সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে, পরিমাপ গ্রহণ করা অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক এই ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ পরিমাপক যন্ত্রই পরিমাপ গ্রহণের কাজে ব্যবহার হয়।সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র
যে সকল পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে রৈখিক মাপ বা ০.০০১ ইঞ্চি এবং কৌণিক মাপ ৫ মিনিট বা অধিক সূক্ষ্মতায় মাপ গ্রহণ করা যায় তাদেরকে সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র বা প্রিসিশন মেজারিং ইন্সট্রুমেন্ট বলে। যেমন বিভিন্ন প্রকার মাইক্রোমিটার, ভার্নিয়ার ইন্সট্রুমেন্টসমূহ ইত্যাদি।অতি সূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র
যে সকল পরিমাপক যন্ত্রের সাহায্যে রৈখিক মাপ ০.০০১ মিমি বা ০.০০০১ ইঞ্চি অথবা মাইক্রো ইঞ্চি এবং কৌণিক মাপ ১ মিনিট বা তার এক-দশমাংশ সূক্ষ্মতায় মাপ গ্রহণ করা যায় তাদের অতিসূক্ষ্ম পরিমাপক যন্ত্র বলা হয়।যেমন- ভার্নিয়ার মাইক্রোমিটার, সাইনরার, স্লিপ গেজ ইত্যাদি।
অসূক্ষ্ম ও সূক্ষ্ম পরীক্ষণ ও পরিমাপকরণের প্রয়োগক্ষেত্র
সাধারণ কাজে সাধারণ পরিমাপ গ্রহণ করে কাজ করা হয়। অর্থাৎ যে সকল উৎপন্ন দ্রব্য প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়। সেই সকল কাজে অসুস্থ পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় আর এদের পরীক্ষণ ও পরিদর্শন তত গুরুত্বপূর্ণ হয় না।যেসব ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা হলো-
- রাফ বেঞ্চ ওয়ার্ক, অর্থাৎ ফাইলিং কাজ, কাটিং কাজ ও চিপিং কাজ
- রাফ মেটাল ওয়ার্ক অর্থাৎ কোনো ধাতব বস্তুর আকৃতি দান করে তা সংযোগ করা।
- ওয়েল্ডিং-এর কাজ, অর্থাৎ ওয়েল্ডিং জোড়ের মাধ্যেমে কোনো কাঠামো তৈরি করা।
- কার্পেন্ট্রি শপের কাজ, অর্থাৎ কাঠের কাজ, কোনো কাঠামো তৈরি করা।
- মজুত কক্ষে কাঁচামাল গ্রহণ ও সরবরাহ।
উপরোক্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষণ ও পরিদর্শনের জন্য কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। চাক্ষুষ পরিদর্শনেই সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হয়।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও আপগ্রেড প্রতিনিয়ত হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো, সঠিক কাঁচামালের প্রয়োগ, সঠিক ও সূক্ষ্ম মাপমতো অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অতি দক্ষ কারিগর দ্বারা ক্রেতার মনকাড়া পণ্য উৎপাদন করা। আর এ ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম পরিমাপ গ্রহণ এবং এর দক্ষ পরীক্ষণ ও পরিদর্শন অপরিহার্য। এর জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা হলো
- লেদ মেশিনে মেশিনিং কাজে সূক্ষ্মতা নিশ্চিতকরণ।
- মিলিং মেশিনের বিভিন্ন উৎপাদন কাজের সুক্ষ্মতা নিশ্চিতকরণ।
- বোরিং এবং হনিং(সিলিন্ডার বোরিং) এর কাজের সূক্ষ্মতা নিশ্চিতকরণ।
- সিলিন্ড্রিক্যাল গ্রাইন্ডিং ও সারফেস গ্রাইন্ডিং এর কাজের সূক্ষ্মতা নিশ্চিতকরণ।
- ডাই ও পাঞ্চ তৈরিতে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কাজের সূক্ষ্মতা ও সঠিকতা নিশ্চিতকরণ।
- সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির ব্যবহার পরবর্তী সময়ে এদের সূক্ষ্মতা ও সঠিকতা নিশ্চিতকরণ।
বর্তমানে আমাদের দেশসহ অন্যান্য দেশে শিল্পকারখানাতে মানসম্মত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত আধুনিক ও ব্যয়বহুল এনসি (NC) ও সিএনসি (CNC ) মেশিন যেমন লেদ, মিলিং, শেপার, ড্রিলিং সার্ফেস গ্রাইন্ডিং, সিলিন্ড্রিক্যাল গ্রাইন্ডিং, বিশেষ ধরনের ওয়েল্ডিং মেশিন ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব মেশিনে উৎপাদন করতে গেলে পূর্বেই এর প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয়। এ ব্যবস্থায় কোন ম্যাটরিয়াল ব্যবহার হবে, কোন টুলস কখন কাজ করবে তাও পূর্বে নির্ধারণ করা থাকে প্রোগ্রামে। তাই নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত মানের উৎপাদন পাওয়া সম্ভব হয়।